ইলমে গায়ব

🖋কৃতঃ মুহাম্মদ রাশেদ

---

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমে গায়ব জানে -এটা বিশ্বাস করা কি শিরক? এটা কি বিদ'আত?


আল্লাহ পাক সূরা জীন শরীফের ২৬ ও ২৭ নং আয়াত শরীফে বলেছেন,


২৬ নং আয়াত শরীফ,

'অদৃশ্যের       জ্ঞাতা, সুতরাং       আপন অদৃশ্যের উপর কাউকেও   ক্ষমতাবান করেন না-


২৭ নং আয়াত শরীফের প্রথমাংশ,

'আপন    মনোনীত   রাসূলগণ ব্যতীত।'


এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, 

আল্লাহ পাকই ইলমে গায়ব তথা অদৃশ্য জ্ঞানের একমাত্র  অধিকারী। আপন মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত, তিনি কাউকে ইলমে গায়ব দেন না। অদৃশ্যের জ্ঞান অবহিত করেন না।


তার মানে, আল্লাহ পাকের মনোনীত রাসূলগণ ইলমে গায়ব জানেন। আল্লাহ পাক তাঁদের ইলমে গায়ব জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁকে যতটুকু ইচ্ছা।


এখন বলুন, নবী করীম (ﷺ) কি আল্লাহ পাকের মনোনীত রাসূল নন? যদি তিঁনি মনোনীত রাসূল না হন, তাহলে আল্লাহ পাকের দয়ায় গায়ব জাননেওয়ালা রাসূল কে/কারা? আর, যদি আক্বা করীম (ﷺ) মনোনীত রাসূল হয়ে থাকেন, তো তিঁনি ইলমে গায়ব জানবেন না কেন?


দ্বীন ইসলাম তো পুরোটাই ইলমে গায়বে ভরাট।


আচ্ছা, বলুন তো, কবর-হাশর, জান্নাত -জাহান্নাম, আখিরাত, কেয়ামত, ফেরেশতা, পুলসিরাত, হাউজে কাউসার - এসব কি গায়ব নয়?


নবী পাক (ﷺ) পবিত্র জবানের ইরশাদ ছাড়া আমরা এসব কিভাবে জানতাম? নবী করীম (ﷺ) এর ইরশাদ ছাড়া, আপনার নিকট কোনো প্রমাণ আছে এসবের? 


আপনি বলবেন, আল্লাহ পাক বলেছেন! আমরাও তো সেটাই বলি যে, আল্লাহ পাকের দয়ায় ও প্রদত্ত ক্ষমতায় আল্লাহ পাকের হাবীব (ﷺ) ইলমে গায়ব জানেন।


সব গায়বের সেরা গায়ব স্বয়ং আল্লাহ পাকই যখন তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) হতে লুকায়িত থাকেননি, দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ এর আয়োজন করেছেন মিরাজ রজনীতে, তখন আপনি আর কি গায়ব রাসূলে পাক (ﷺ) এর অগোচরে আছে বলে মনে করেন?


যেখানে আল্লাহ পাক নিজেই ঘোষণা দিলেন, তিঁনি তাঁর মনোনীত রাসূলগণকে গায়ব অবহিত করান, সেখানে আপনার সমস্যা কি?


নবী করীম (ﷺ) যদি গায়ব না জানতেন তো,

১. কিয়ামতের নিদর্শনগুলো ও কিয়ামত দিবসের অবস্থা কিভাবে বললেন?

২. কোন আমলে কতো সাওয়াব ও কী ফজিলত

কিভাবে বললেন?

৩. কবর হতে শুরু করে হাশর, মিযান, পুলসিরাতের কথা খুঁটিনাটি সবিস্তারে কিভাবে বললেন? 

৪. জান্নাত ও জাহান্নামের পরিপূর্ণ বিশদ বিবরণ কিভাবে দিলেন?

৫. কোন আমলে জান্নাত ও কোন আমলে জাহান্নাম কিভাবে বললেন?

৬. আশরায়ে মুবাশশারাহদের কথা কিভাবে বললেন?

৭. বদরের যুদ্ধে কাফেরদের মৃত্যু ও মৃত্যুস্থান আগাম চিহ্নিত করলেন কিভাবে?

৮. সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সুস্পষ্ট বিবরণ কিভাবে দিলেন?

৯. সকল হাদীস শরীফ কি গায়বের এক একটা খনি নয়? গায়বের ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত হাদীস শরীফের কিতাব সমূহে বিদ্যমান!

১০. জন্ম, মৃত্যু, রিযিক, বৃষ্টি - এসবই তো গায়বের অন্তর্ভুক্ত, তাই নয় কি? তো, এসবের আগাম ভবিষ্যৎবাণী ও ঘটনাতে হাদীস শরীফ ভরপুর! বর্তমানে, ডাক্তার ও আবহাওয়াবিদরাও জন্ম, মৃত্যু ও ঝড় বৃষ্টির ভবিষ্যৎবাণী দিচ্ছে!


আমি এখানে কয়টির কথা বলবো! আপনি চোখ কান মনকে আদব ও ইশকের আলখেল্লা পরিয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফ তেলাওয়াত করুন। পর্দা সরে যাবে।


পবিত্র কুরআনে ভেজা ও শুষ্ক, অতীত ও ভবিষ্যত, দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল বিষয়ের জ্ঞান বিদ্যমান। আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে (ﷺ) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তার মানে, কুরআন পাকের সকল জ্ঞান ও রহস্য নবী পাকের (ﷺ) পবিত্র সিনা মুবারকে সংরক্ষিত। সেখান হতে যখন যা প্রয়োজন, তখন তা তিনি প্রকাশ করেছেন। যা প্রকাশ করার নয়, তা প্রকাশ করেননি। উম্মতের খাতিরে যা বলার দরকার ও অনুমতি পেয়েছেন, তার সবটুকুই বলে দিয়েছেন। যা গোপন করার হুকুম পেয়েছেন, তা গোপন করেছেন। জানলেই সবকিছু বলতে নেই। বলতে হয় না। 


কেউ কোনোকিছু প্রকাশ না করার মানে, তিনি জানেন না - এমন ধারণা ও বিশ্বাস তো গলদ!

আমরাও তো নিজ পরিবার, বন্ধু -বান্ধব, ব্যবসা ইত্যাদি সম্পর্কে বহুকিছু জানি, কিন্তু জানি বলেই কি তা প্রকাশ করে দিই?


আল্লাহ পাক গায়বের একচ্ছত্র মালিক। তিঁনি তাঁর প্রিয় হাবীবকে (ﷺ) গায়ব জানালে তাতে আমার আপনার সমস্যা কি?


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নবী পাক (ﷺ) কি আল্লাহ পাকের সকল/সমস্ত ইলমে গায়ব জানেন?


না। আমরা তা বলি না। আল্লাহ পাকের ইলমে কোনো সকল/সমস্ত নেই। কেননা 'সকল/সমস্ত'র ও একটা সীমা/পরিমাণ আছে। কিন্তু আল্লাহ পাকের পবিত্র ইলম অসীম, অখণ্ড/অবিভাজ্য, অপরিবর্তনীয়, শুরুহীন ও অন্তহীন, স্হায়ী ও স্বত্তাগত।


আর, নবী পাক (ﷺ) এর পবিত্র ইলম সসীম, যার শুরু ও শেষ আছে, আল্লাহ প্রদত্ত। 


স্রষ্টার অসীম ইলম সৃষ্টি কখনো ধারণ করতে পারে না। আমরা বলি, আল্লাহ পাক নবীজীকে সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ইলম, বরং আরো বেশি, যতটুক মহান রব তাআলার ইচ্ছা, দান করেছেন।


আপনার ধারণা ও বিশ্বাস কি এরকম যে, আল্লাহ পাকের ইলম শুধু এতটুকুই, সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত? আপনি কি মনে করেন আল্লাহ পাকের অসীম ইলম তিঁনি তাঁর হাবীব পাককে (ﷺ) দান করেছেন? তাই শিরক মনে করেন?


আমরা কিন্তু এরকম বলি না। বিশ্বাসও করি না। তাই আমরা শিরকও মনে করি না। বরং আল্লাহ পাকের অনুগ্রহে গায়ব জানা, এটা রাসূলে পাক (ﷺ) এর একটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বলেই বিশ্বাস করি।


আর, যদি বলেন, নবী করীম (ﷺ) 'আংশিক' ইলমে গায়ব জানেন! আমরাও বলি, হা সত্যই বটে। তবে, আপনাদের ধারণার 'আংশিক' আর আমাদের বিশ্বাসের 'আংশিক' এর মধ্যে আসমান - জমিন তফাৎ!


আপনারা 'আংশিক' বলেন ক্ষুদ্রার্থে ও তুচ্ছার্থে, আর আমরা 'আংশিক' বলি বৃহদার্থে, সম্মানার্থে ও প্রশংসার্থে!


যেমন ধরুন, আপনার নিকট শত সহস্র সহস্র সহস্র কোটি কোটি কোটি বিলিয়ন ট্রিলিয়ন টাকা আছে। আর, আমার কাছে আছে ১০০ টাকা। এখন, আপনার ১০% ও আমার ১০% কি এক সমান? তুলনা করার যোগ্য?


আবার ধরুন, বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর। সেখান হতে আপনাকে একটা পুকুরসম পানি দেয়া হল। এখন, মহাসাগরের পানির সাথে কি পুকুরের পানির কোনো তুলনা চলে? আচ্ছা, আবার সেই পুকুরের পানি একটি পিঁপড়ার মালিকানায় দিলেন। পিঁপড়া জন্য তা কি সমুদ্রসম নয়?


যদিও আল্লাহ পাকের অসীম ইলম, নবী পাক (ﷺ) এর আল্লাহ প্রদত্ত ইলম ও সৃষ্টির সামষ্টিক ইলম পরষ্পরের সাথে তুলনীয় নয়, তুলনা করা সমীচীনও নয়, তবুও বুঝার সুবিধার্থে উপরের উদাহরণ দুটো বলেছি। আল্লাহ পাকের নিকট ভুলভ্রান্তি ক্ষমা চাচ্ছি।


মূল কথা হলো, আল্লাহ পাকের অসীম ইলমের তুলনায় নবী (ﷺ) এর ইলম আংশিক, নগন্য বিন্দু সম, অতুলনীয়। আবার, সমগ্র সৃষ্টির সামষ্টিক ইলম, আল্লাহ পাক প্রদত্ত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই আংশিক ইলমের সামনে একটি নগন্য বিন্দুসম, অতুলনীয়।


আপনি যদি নবী পাক (ﷺ) কে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে গভীরভাবে চিন্তা করুন। আমরাও সেই নবী পাককে (ﷺ) ভালোবেসে ও সম্মান ও প্রশংসার হক হিসেবে বলি, 


' আল্লাহ পাকের মহান অনুগ্রহে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমে গায়ব জানেন। আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে গায়ব জানানোর ব্যাপারে কৃপণতা করেননি। আল্লাহ পাক কৃপণ নন।'


আপনার কাছে কি ইলমে গায়ব না জানাটাই রাসূলে পাক (ﷺ) এর সম্মান মনে হয়?

আর, আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব (ﷺ) কে ইলমে গায়ব প্রদান করলে, আল্লাহ পাকের মর্যাদা ও ইলম কমে যাবেন বলে মনে করেন কি?


আশ্চর্য! 


আল্লাহ পাক ও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষেত্রে 'না ও হা' বলার ব্যাপারে সাবধান হোন।


আল্লাহ পাক আমাদের বুঝার তৌফিক আতা করুক, আমীন।

ú
Top