কেউ কেউ এভাবে মতদ্বয়ের সমাধান করেছেন যে, শবে বরাতে কুরআন শরীফ লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হয়েছে। এর বর্ণনা সূরা দুখানে দেয়া হয়েছে। অতঃপর সেখান থেকে জিব্রাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে তা ক্বদরের রাতে রসূল (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয়ে ২৩ বছরে তার সমাপ্তি ঘটেছে।


১।


উল্লেখ্য এখানে ইবনে আব্বাসের যে বর্ণনার দিকে হযরত (রহঃ) ইঙ্গিত করেছেন তা তাফসীরে মাযহারীতে এভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

“ আল্লাহ তাআলা সকল প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শবে বরাতে এবং তা সংশ্লিষ্টদের নিকট সোপর্দ করেন ক্বদরের রাতে। ”

( দেখুন তাফসীরে মাযহারীঃ খ – ৮, পৃ – ৩৬৮ )




২।

এ মীমাংসার পক্ষে বিবরণ পাওয়া যায় আল্লামা আবুস সাউদ এর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ تفسير ابى السعود তাফসীরে আবি সাউদ এর মধ্যে। তিনি বলেনঃ

“ মোবারক রাত থেকে উদ্দেশ্য হলো, শবে ক্বদর। কেউ কেউ বলেছেনঃ এর উদ্দেশ্য হল, শবে বরাত। এ রাতে কুরআনের অবতরণ আরম্ভ হয় অর্থাৎ এ রাত্রে পরিপূর্ণ কুরআন দুনিয়ার আসমানে লৌহে মাহফুজ থেকে একসঙ্গে অবতীর্ণ হয় এবং হযরত জিবরাইল (আঃ) তা তাখতির মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন।

“ প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়সালা হয় ” (এ ব্যাপারে বলেন) কেউ কেউ বলেছেনঃ

শবেবরাতে লওহে মাহফুজ থেকে লিখিতভাবে অবতরণ আরম্ভ হয় এবং শবে ক্বদরে গিয়ে তার সমাপ্তি ঘটে। রিযিকের বিষয়ে লিখিত তাখতী মিকাঈল (আঃ) কে দেয়া হয়। যুদ্ধ-বিবাদ বিষয়-সম্বলিত তাখতী জিবরাঈল (আঃ) কে অনুরূপ ভূমিকম্প, বিজলীর গর্জন, ভূমি ধসে পড়ার বিষয়গুলোও তাকে দেয়া হয় এবং সকল আমলের বিষয় দুনিয়ার আসমানের বিশিষ্ট ফেরেশতা ইসমাইলকে প্রদান করা হয়। বিপদ ও মুসিবতের বিষয়গুলো আযরাঈল (আঃ) কে প্রদান করা হয়। ”

( দেখুন তাফসীরে আবি সাউদঃ খ – ৬, পৃ – ৪৭ )

৩।

উক্ত মতের স্বপক্ষে তাফসীরে জালালাইনে বিবরণ পাওয়া যায় এভাবেঃ

“ মোবারক রাত অর্থ হচ্ছে, শবে ক্বদর অথবা মধ্য-শাবানের রাত যে রাতে কুরআন শরীফ সপ্তম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হয়। ”

( দেখুন জালালাইন শরীফঃ পৃ – ৪০৮ )

৪।

ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রহঃ) এ ব্যাপারে সবিস্তারে আলোচনা করার পর মাসআলার শেষে বলেছেনঃ

“ বলা হয়েছে যে, শবে বরাতে লওহে মাহফুয হতে কুরআন অবতরণের কাজ শুরু হয় এবং শবে ক্বদরে এসে তার সমাপ্তি ঘটে। ”

( দেখুন তাফসীরে কবীরঃ খ – ১৪, পৃ – ৩৪১ )



৫।

অনুরূপ শেখ মুহাদ্দিছে দেহলভী (রহঃ) তার স্বীয় গ্রন্থ “ মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ ” এবং “ মাজালিসুল আবরার ” গ্রন্থদ্বয়ে সূরা দুখানের আয়াতসমূহ থেকে শবে বরাত উদ্দেশ্য বলে সাব্যস্ত করেছেন।

( দেখুন মাজালিসুল আবরারঃ পৃ – ১৭৭ )


আল্লামা আব্দুলহক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) ما ثبت بالسنة এর বিবরণটি নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

“ অধিকাংশ উলামাদের মতামত হলো, কুরআন অবতরণ ও প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফয়সালা শবে ক্বদরে সম্পন্ন হলেও এসব বিষয় আরম্ভ হয়েছে শবে বারাত তথা মধ্য শাবানের রাতে। ”

( দেখুন হাকীকতে শবে বরাতঃ পৃ – ৮ )


ú
Top