ওহাবী সালাফীদের জবাবে তাবিজ ও ঝাড়ফুক এর ব্যাপারে শরীয়তের বিধি-নিষেধ।
Lecture : Masum Billah Sunny
এক নজরে সম্পুর্ন আলোচনায় কি কি আছে তা :
STEP 1 : যেসব তাবিজ ও ঝাড়ফুক শিরিক, কুফর , নাজায়েজ তার শর্ত ও হাদিস সমুহের ব্যাখ্যা সহ আলোচিত হল।
STEP 2 :
a)
-i- যেসব তাবিজ ও ঝাড়ফুক জায়েজ ও সুন্নাহ তার শর্ত ও হাদিস সহ আলোচনা করা হল।
-ii- কুরআন ও হাদিসের আলোকে ঝাড়ফুক ও তাবিজের প্রমান।
b) নযর ও বাতাস লাগা সত্য এ সম্পর্কে।
c) হাদিস থেকে ঝাড়ফুকের বিভিন্ন দোয়া।
d) তাবিজ ও ঝাড়ফুক সম্পর্কে ইমামগনের আকিদা।
e) প্রশ্নোত্তর পর্ব
``হালালকে হারাম মনে করা আর হারামকে হালাল মনে করা কুফর।`` -(আল-হাদিস)
STEP 1 :
যেসমস্ত ঝাড়-ফুক নাজায়েজ ও শিরিক- কুফর :
মোট কথায় যা অকল্যানকর ও শরীয়ত বিরোধী কুফরী কালাম ব্যবহৃত তাবিজ বা আয়াত দ্বারা যে সমস্ত ঝাড়ফুক সেগুলো স্পষ্ট শিরিক-কুফর :
নিম্নে উল্লেখিত বিষয় দ্বারা ঝাড়ফুঁক বা তাবিজ জায়েয নয়:
(১) এমন শব্দ বা বাক্যের অর্থ যা বোধগম্য নয় (এর দ্বারা শরীয়ত বিরোধী কাজ সংঘঠিত হওয়ার আশংকা রয়েছে);
যেমন : আল্লাহর নাম, দুয়ায়ে মানকুলা ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ দেয়া জায়েজ। তবে শর্ত হল তাবিজের মধ্যে নিজস্ব মতা আছে মনে করে তার উপর ভরসা না করা। তাছাড়া কুফুরী কালাম দ্বারা তাবিজ দেয়া বা অর্থ জানা যায়না এমন কালাম দ্বারা তাবিজ দেয়া জায়েজ নয়। (আহসানুল ফাতওয়া, খন্ড ৮, পৃঃ ২৫৫)।
(২) আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় (ব্যবহার না করা ভাল), তবে না জায়েজ নয় তা যে কোন ভাষায় হোক না কেন তাতে কুফুরী বাক্য না থাকা অত্যবশ্যক।
(৩) কুফুরী-শিরিকী কালাম দ্বারা;
(৪) ঝাড়-ফুঁকের মধ্যে নিজস্ব ক্ষমতা আছে মনে করা।
(৫) ঝাক-ফুক (আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত) নিজের ক্ষমতায় তকদীর পরিবর্তন করতে পারে মনে করা ইত্যাদি।
যে সব হাদীছে ঝাড়ফুঁককে নিষেধ করা হয়েছে বা শিরক বলা হয়েছে তা উপরোক্ত ধরনের ঝাড়ফুঁক, সব ধরনের ঝাড়ফুঁক ওই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়। যেমন আবু দাউদ শরীফের হাদীছ -
ان الرقى والتمائم والتولة شرك
অর্থাৎ, ঝাড়ফুঁক ও তাবীজ শিরক।
পূর্বের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে বৈধ পন্থায় বৈধ বিষয়ে ঝাড়ফুঁক জায়েয। বর্তমান যুগের গায়রে মুকাল্লিদ ও সালাফীরা তাবীজ-কবজকে নিষিদ্ধ এমনকি শিরক বলে থাকে।
যেমন :
→ আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের স্ত্রী যায়নাব আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের কাছ থেকে বর্ণনা করেন: “আমি রাসূল (স) কে বলতে শুনেছি যে ঝাড়ফুঁক তাবিজ ও কবচ হচ্ছে শিরক।” আমি বললাম, ‘আপনি কেন একথা বললেন? আল্লাহর কসম, আমার চোখ দিয়ে অসুখের কারণে পানি ঝরছিল এবং আমি অমুক ইহুদীর কাছে গিয়েছিলাম, সে ঝাড়ফুঁক করতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘এটা শয়তানের কারসাজি ছিল, সে তার হাত দিয়ে তোমার চোখে খোঁচা দিচ্ছিল,★ ইহুদীটি মন্ত্র উচ্চারণ করতেই সে থেমে গেল। কারণ যখন তুমি তাকে মেনে নিচ্ছিলে সে থেমে যাচ্ছিল আর যখন তুমি তার অনুগত হচ্ছিলে না তখন সে খোঁচা দিচ্ছিল। তোমার যা বলা উটিত ছিল তা হচ্ছে এই দু’আ: ইযহাবিল বা’স রাব্বান নাস ওয়া আশফি আনতা আশ শাফি’ লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফা’ আল লা ইউঘাদিরু সাকামান।’ (অর্থ: মন্দ দূর কর, হে মানবজাতির রব, এবং সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া কোন আরোগ্য নেই, এমন আরোগ্য যা রোগের কোন চিহ্ন রাখে না।) (আবু দাউদ ৩৮৮৩; ইবন মাজাহ ৩৫৩০)
Note: ইহুদীদের মন্ত্র তো আর কুরআন হাদিস নয় তাই নিষিদ্ধ শিরিক এসব বলা হয়েছে।
→ ইবনে মাসউদ (রঃ) এর পত্নী জয়নাব (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক (★ 0) বুড়ি আমাদের বাড়ি আসা যাওয়া করত এবং সে বাতবিসর্প - রোগে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমাদের ছিল লম্বা খুরো বিশিষ্ট খাট। (স্বামী) আব্দুল্লাহ বিন মসউদ যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন গলা সাড়া বা কোন আওয়াজ দিতেন। একদিন তিনি বাড়িতে এলেন। (এবং অভ্যাস মত বাড়ি প্রবেশের সময় গলা সাড়া দিলেন।) বুড়ি তার আওয়াজ শোনামাত্র লুকিয়ে গেল। এরপর তিনি আমার পাশে এসে বসলেন । তিনি আমার দেহ স্পর্শ করলে (গলায় ঝুলানো মন্ত্র পড়া) সুতো (★ 1) তার হাতে পড়ল। তিনি বলে উঠলেন, ‘এটা কি?’ আমি বললাম, ‘সুতা পড়া, বাতবিসর্প রোগের জন্য ওতে মন্ত্র পড়া হয়েছে (★2) ।’ একথা শুনে তিনি তা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘ইবনে মসউদের বংশধর তো শিরক থেকে মুক্ত।’ আমি রাসুল (সঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “নিশ্চয় মন্ত্র তন্ত্র (★3) , তাবীয কবচ (★4) এবং যাদু-টোনা করা শিরক (★5) ।”
জয়নাব (রঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘কিন্তু একদা আমি বাইরে বের হলাম। হটাৎ করেই আমাকে অমুক লোক দেখে নিল। অতঃপর আমার যে চোখটা ঐ লোকের দিকে ছিল সেই চোখটায় পানি ঝরতে লাগলো। এর পর যখনই আমি ঐ চোখে মন্ত্র পড়াই, তখনই পানি ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। আর যখনই না পড়াই, তখনই পানি ঝরতে শুরু করে। (অতএব বুঝা গেল যে, মন্ত্রের প্রভাব আছে।)’
ইবনে মসউদ (রঃ) বললেন, “ওটা তো শয়তানের কারসাজি (★6) । যখন তুমি ( মন্ত্র পড়িয়ে ) ওর অনুগত্য কর, তখন সে ছেড়ে দেয়। (এবং তোমার চোখে পানি আসে না)। আর যখনই তুমি তার অনুগত্য কর না, তখনই সে নিজ আঙ্গুল দ্বারা তোমার চোখে খোঁচা মারে ( এবং তার ফলে তাতে পানি আসে, যাতে তুমি মন্ত্রকে বিশ্বাস কর এবং শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়)। তবে যদি তুমি সেই কাজ করতে, যা আল্লাহর রাসুল (সঃ) করেছেন, তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম ও মঙ্গল হতো এবং অধিকরূপে আরোগ্য লাভ করতে। আর তা এক যে, চোখে পানি ছিটাতে এবং বলতে,
“আযহিবিল বা’স, রাব্বানা-স, ইসফি আন্তাস শা- ফী, লা সিফা-আ ইল্লা সিফ-উক, সিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাকামা।” (ইবনে মাজাহ ৩৫৩১ নং, সিলসিলাহ সহিহাহ ৩৩১ নং)
Explain :
(★ 0) বুড়িটি ছিল ইহুদী তাই সে তো তাদের দেব-দেবীর মন্ত্রই পড়বে সে তো আর কুরআন হাদিসের মন্ত্র পড়বে না । এতে শিরিক বা কুফুরি কালাম থাকতেই পারে।
(★ 1) এটা ছিল ইহুদী মন্ত্র পঠিত সুতা।
(★ 2) ওদের দেব-দেবীর নামে মন্ত্র পড়া হয়েছে। আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কাউকে প্রভু হিসেবে ডাকা স্পষ্ট শিরিক।
(★ 3) ইহুদী-নাসারাদের মন্ত্র
(★ 4) তাদের মন্ত্র পঠিত তাবিজ-কবজ ব্যবহার শিরিক।
(★ 5) জাদু-টোনা শব্দটি দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়ে গেল এটা বিধর্মীদের তাবিজ-কবজ বা মন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।
(★ 6) এটা শয়তানের চালাকী। কারন ইহুদী নাসারাগন তাদের ধর্মগ্রন্থ পরিবর্তন করে ফেলেছে। আল্লাহ, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন মাজিদে কোথাও কি নিজে ১ প্রভু হয়ে একাধিক প্রভুর ব্যপারে সমর্থন দিতে পারে? কখনোই না। সুতরাং সেসব মন্ত্র ব্যবহারকারীরা তাদের বিভিন্ন দেব-দেবীর নামে মন্ত্র পড়ে আর এটা মুলত তারা শয়তান থেকে সাহায্য চাওয়া। তাই এখানে স্পষ্ট শিরিকি তাবিজের কথাই নিষেধ করা হয়েছে।
→ ঈসা ইবন হামযা বলেন: “আমি আব্দুল্লাহ ইবন আকিমকে দেখতে গিয়েছিলাম, তাঁর মুখ জ্বরে লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘আপনি কেন তাবিজ ব্যবহার করছেন না?’ তিনি বললেন, ‘আমরা এ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। রাসূল (সা) বলেছেন: যে (ব্যক্তি) কোন ধরনের (শরীয়তবিরোধী) তাবিজ পরবে সে সেটার অধীনে আছে বলে বিবেচিত হবে… ’ ”(অর্থাৎ সে তারই উপর নির্ভরশীল) (আবু দাউদ)
Note :
কুফরী-কালাম ও শিরিকি বাক্য লিখিত তাবিজ ব্যবহার বা যাদু-টোনা শিরিক।
→ আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ একদিন তাঁর স্ত্রীকে দেখলেন একটি ★ গিঁট দেয়া সূতা গলায় পরতে। তিনি সেটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “আব্দুল্লাহর পরিবার আল্লাহর সাথে অন্য কোন কিছুকে শরীক করা থেকে মুক্ত।” তারপর তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি: ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও ★ বশীকরণ (মানে জাদু-টোনার দ্বারা বশীভুত করা) এগুলি হচ্ছে শিরক।”
Note :
এর মানে হল নাজায়েজ তাবিজ। কারন ★ দিয়ে কথাটিতে বশীকরন মানে হল জাদু-টোনা যা স্পষ্ট হারাম ও শিরিক।
→ ইমরান ইবন হুসাইন বর্ণনা করেছেন যখন রাসূল (সা) এক ব্যক্তির বাহুতে ★ পিতলের বালা দেখতে পেলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ধ্বংস হোক! এটা কি?” সে বলল, “এটা তাকে একটা রোগ যার নাম ★ আল-ওয়াহিনা (দুর্বলতা, সম্ভবত: বাত), তা থেকে রক্ষা করবে।” রাসূল (সা) তখন বললেন “ওটা ছুঁড়ে ফেলে দাও, কারণ এটা তোমার দুর্বলতাই বৃদ্ধি করবে এবং যদি তুমি এটা পরা অবস্থায় মারা যাও, তুমি কখনও সফল হবে না।” (আহমাদ; ইবন মাজাহ; ইবন হিব্বান)
Note : তার ধারনা ছিল উক্ত পিতলের বালাই রোগমুক্তির ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমাদের আকিদা হল যেসব তাবিজ বা ঝাড়ফুক জায়েজ সেগুলো শুধুমাত্র উসীলাস্বরুপ সুস্থতা দান করার মালিক আল্লাহ।
যেমন : এই হাদিসের উত্তম ব্যাখ্যা অপর হাদিসে পাওয়া যায় :
→ রাসূল (সা) বলেন “তোমরা অসুস্থতার চিকিৎসা কর, কিন্তু হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করো না।” (আবু দাউদ, বায়হাকী)
STEP 2 :
যে সমস্ত ঝাড়-ফুক বা তাবিজ জায়েজ :
১) এক কথায় সমস্ত কল্যানকর কাজে ব্যবহৃত শিরিক ও কুফর বাক্য মুক্ত ও যাতে কুরআন, হাদিস থেকে দোয়া রয়েছে বা কুরআন হাদিস সম্মত কোনকিছু ।
২) ওষুধ খেলে রোগ সেরে যায়। আল্লাহ রোগ দিল আর ওষুধ সুস্থ করে দিল এমন ভাবা শিরিক।
মুলত আল্লাহই সুস্থ করেছেন আর ওষুধ "ওসীলা বা মাধ্যম" মাত্র আর কিছু নয়। তেমনি তাবিজ বা ঝাড়ফুক ব্যবহার করাও হল "ওষুধের মতই ওসীলা স্বরুপ"
৩) ওষুধ খেলে বা তাবিজ দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন এমন ভাবাও ঠিক না, সুস্থ হলে এটাও আল্লাহই করেছেন বলে ভাবতে হবে। রোগ ও রোগমুক্তি কিভাবে হবে সব ভাগ্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
আল-কোরআন ও হাদিস থেকে প্রমান :-
আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন -
و اذا مرضت فهو يشفين -
(ইব্রাহিম আ: বলেন), “আমি যখন রোগে আক্রান্ত হই তখন তিনি-ই (আল্লাহ) আমাকে রোগমুক্ত
করেন।” (সূরা শুআরা: আয়াত ৮০)
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মানব দেহে রোগ-বিমার দিয়ে মু’মিনদের পরীক্ষা করেন। আবার রোগের প্রতিষেধকও তিনি দান করেন।
বুখারী শরীফে বর্ণিত একখানা হাদীসে রাসূলে পাক (দ:) এরশাদ করেন -
“আল্লাহ এমন কোনো রোগ প্রেরণ করেন না যার আরোগ্য নেই।
আল্লাহ্ পাক আরও বলেন -
وننزل من القوأن ما هو شفاء ورحمة للمؤمنين-
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।“ (সূরা বনী ইসরাঈল: ৮২)
আল্লাহ্ তা’আলা আরও এরশাদ করেন -
ويشف صدور قوم مؤمنين-
“তিনি মুমিনদের অন্তরের রোগ নিরাময়কারী” (সূরা তওবা: আয়াত ১৪)।
নিচে স্পষ্ট প্রমান দেয়া হল :
→ শিফা (আরোগ্য) : সুরা ফাতিহার অপর ১টি নাম হল শিফা বা আরোগ্যের সুরা। দেখুন নিচের হাদিস সমুহে।
রেফারেন্স :
★ দারেমী হা/৩৩৭০, মুহাক্কিক : হুসাইন আসাদ সালীম, সনদ মুরসাল ছহীহ;
★ মিশকাত হা/২১৭০।
হাদিস :
→ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুবলেনঃ
আমি একদিন এক স্বর্প দংশিত অর্ধমৃতরোগীকে সুরা ফাতিহা পাঠ করে ফুঁদিয়ে রোগমুক্ত করি। এতে তার পিতা খুশি হয়ে আমাকে এক পাল ছাগল দান করেন। আমি তা নিয়ে হুযুরসল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে ঘটনা বর্ণনা করলাম। হুযুর সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-রান্না করে আমাকেও কিছু গোশত দিও।-সুবাহানাল্লাহ
(আল হাদিস)
→ রুক্বইয়াহ (ফুঁকদান) : উক্ত সুরার অপর নাম (রুক্কইয়াহ বা ফুকদান) কারন ইহা পাঠ করে ঝাড়ফুক করা হত। এজন্য এ সূরাকে রাসূল (ছাঃ) ‘রুক্বইয়াহ’ (الرُّقْيَةُ) বলেছেন। কেননা এই সূরা পড়ে ফুঁক দিলে আল্লাহর হুকুমে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। নিচের হাদিসগুলো পড়ুন :
রেফারেন্স :
★ বুখারী হা/৫৭৩৬,
★ মুসলিম হা/২২০১ ‘সালাম’ অধ্যায়; তাফসীর কুরতুবী, ইবনু কাছীর।
→ সুরা ফাতিহা এবং সূরায়ে বাক্বারাহর শেষ তিনটি আয়াত হ’ল আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি।
রেফারেন্স :
★ মুসলিম হা/৮০৬ অধ্যায়-৬, ‘সূরা ফাতিহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪৩,
★ মিশকাত হা/২১২৪।
→ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, একদা এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন ও তিনি সুস্থ হন...।
রেফারেন্স :
★ বুখারী হা/৫৭৩৭ ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়;
★ মিশকাত হা/২৯৮৫।
এই ব্যপারে অনেক সহিহ হাদিস বর্নিত হয়েছে :
→ হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত আছে, তিনি বলেনঃ
”একবার আমরা সফরে ছিলাম। একস্থানে আমরা অবতরণ করি। হঠাৎ একটি দাসী এসে বললোঃ
এ জায়গার গোত্রের নেতাকে সাপে কেটেছে। আমাদের লোকেরা এখন সবাই অনুপস্থিত। ঝাড় ফুঁক দিতে পারে এমন কেউ আপনাদের মধ্যে আছে কি? আমাদের মধ্য হতে একজন তার সাথে গেল। সে যে
```ঝাড় ফুঁকও``` জানতো তা আমরা জানতাম না। তথায় গিয়ে সে কিছু ঝাড় ফুঁক করল।
আল্লাহর অপার মহিমায় তৎক্ষণাৎ সে সম্পূর্ণ রুপে আরোগ্য লাভ করল। অনন্তর সে ৩০ টি ছাগী দিল এবং আমাদের অতিথেয়তায় অনেক দুধও পাঠিয়ে দিল। সে ফিরে আসলে আমরা তাকে জিজ্ঞাস করলাম:
তোমার কি এ বিদ্যা জানা ছিল? সে বললঃ আমি তো শুধু সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়েছি। আমরা বললাম, তাহলে এই প্রাপ্ত মাল এখনও স্পর্শ করো না। প্রথমে রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করো। মদিনায় এসে আমরা রসুল্লল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ ঘটনা হুবুহু বর্ণনা করলাম।তিনি বললেনঃ এটা যে ফুঁক দেওয়ার সুরা তা সে কি করে জানলো? এ মালভাগ করো। আমার জন্যেও এক ভাগ রেখো।
★ সহীহ বুখারী ”ফাযায়িলুল কুরআন” অধ্যায়।
★ সহীহমুসলিম;
★ সুনানে আবু দাউদ
→ সহীহ মুসলিমের কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, ফুঁক দাতা হযরত আবু সাঈদখুদরী (রাঃ)।
(তাফসির ইবনে কাসির ১ম খন্ডসুরা ফাতিহার ফযীলত)
→ হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
নবী করীমসল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের একটি দল পানির কোন ঘাট ( কুপ) এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন,যাদের মধ্যে ( কুপওয়ালাগণের) একজনকে বিচ্ছু কিংবা সাপ দ্বারা দংশিত লোক ছিলো। তখন ঘাট বা কুপ ওয়ালাদের মধ্যে একজন তাঁদের নিকট এসে বলল, আপনাদের মধ্যে কেউ ঝাড়ফুঁক কারী আছেন? কুপ বা ঘাট ওয়ালাদের মধ্যে একজন লোক বিচ্ছু কিংবা সাপ দ্বারা দংশিত হয়েছে। তখন সাহাবীদের মধ্যে একজন কিছু সংখ্যক ছাগলের শর্তে গেলেন। অতঃপর সুরা ফাতিহা পড়ে ঝেড়ে দিলেন। সে সুস্থ হয়ে গেলো। তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিকট ছাগলগুলো নিয়ে আসলেন। সাহাবীগণ তা অপছন্দ করলেন। তাঁরা বললেন, আপনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন? অবশেষে তাঁরা মদীনা মুনাওয়ারায় আসলেন। আর আরয করলেন,হে আল্লাহর রসুল! ইনি আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়েছেন। তখন রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় পারিশ্রমিক নেয়ার সর্বাদিক উপযোগী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।
রেফারেন্স :
★ [ সহীহ বুখারী]
★ অন্য এক বর্ণনায় এমনি রয়েছে যে, তোমরা ঠিক কাজ করেছো। সেটা ভাগ করে নাও এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও এক ভাগ রেখো!”
★ [ মিশকাতশরীফ “বাবুল ইজারা” অধ্যায়,হাদিস নং২৮৫১]
→ হযরত খারেজাহ্ ইবনে সালত ( তাবেঈ) হতে বর্ণিত,
তিনি তাঁর চাচা ( সাহাবী) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
আমরা রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে রওনা হলাম। অতঃপর আরবের একটা গোত্রের নিকট আসলাম। তারা বললো, আমরা খবর পেয়েছি যে, তোমরা ওই মাহবুব (সা) এর নিকট থেকে বড় কল্যাণ নিয়ে এসেছো। তোমাদের নিকট কি কোন ঔষধ কিংবা দম ( মন্ত্র) আছে? আমাদের নিকট এক পাগল বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। আমরা বললাম, হ্যা আছে। তারা পায়ে বেড়ী পরানো এক পাগলকে নিয়ে আসলো। আমি তিনদিন যাবৎ সকাল – সন্ধ্যায় তার উপর সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়েছি। আমি আমার থুথু একত্র করতাম তারপর তার উপর ফুঁকতাম। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেছেন, অতঃপর সে যেন বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে গেল। তারা আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দিল। আমি বললাম, না। (এটা আমি খাব না) যে পর্যন্ত না রসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করে নেবো। হুযুর এরশাদ ফরমালেন, খাও। আমার জীবনের শপথ ! অবশ্য যে ব্যক্তি বাতিল মন্ত্র দ্বারা খায়, (তার জন্য নিষিদ্ধ)। তুমি তো খাচ্ছো সত্য মন্ত্র (কোরআনের ঝাড়ফুঁক) দ্বারা।
রেফারেন্স :
★ মুসনাদে আহমদ,
★ আবু দাউদ,
★ মিশকাতুল মাসাবিহ ”বাবুল ইজারা” অধ্যায়,হাদিসনং২৮৫৩
→ ইমাম কুরতুবী বলেন, সূরা ফাতিহাতে যে সকল ‘ছিফাত’ রয়েছে, তা অন্য কোথাও নেই। এমনকি একেই ‘আল-কুরআনুল আযীম’ বা মহান কুরআন বলা হয়েছে (হিজর ১৫/৮৭)।
রেফারেন্স :
★ তাফসীর কুরতুবী ১/১৪৮-৪৯।
→ রাসূলুললাহ (ছাঃ) তাঁকে ব্যথার স্থানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ও সাত বার
أَعُوْذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
পাঠ করতে আদেশ দিলেন এবং তাতে তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন’।
রেফারেন্স :
★ মিশকাত হা/১৫৩৩; কুরতুবী ১/৯৮।
→ উসমান ইবনে আবুল আ’স (রঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট ঐ ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি তার দেহে অনুভব করছিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেন, “তুমি তোমার দেহের ব্যথিত স্থানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ এবং সাতবার ‘আউযু বিইযযাতিল্লাহি অকদরাতিহি মিন সাররি মা আজিদু অউহাযিরু’ বল।” অর্থাৎ আল্লাহর ইজ্জত এবং কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করছি, সেই মন্দ থেকে যা আমি পাচ্ছি এবং যা থেকে আমি ভয় করছি।
রেফারেন্স :
★ মুসলিম হা/২২০২
→ নবী করিম সল্লল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি কোরআন মজিদের দ্বারা রোগ মুক্ত হতে পারেনি- তার জন্য আল্লাহ যেন কোন শেফা মঞ্জুর না করেন” – (আল হাদিস)
→ নবী করিম সল্লল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-” সুরা ফাতিহা মৃত্যু ব্যতীত সবরোগের ঔষধ” (তাফসিরে কাশ শাফ)
মানব দেহের রোগ-বিমারের বিভিন্ন দিক থাকতে পারে। যেমন শারীরিক রোগ, মানুষ ও জ্বিনের কুদৃষ্টি, তাবিজ-টোনা ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো এবং এর প্রতিকারে ঝাড়ফুঁক বা তাবিজ-দোয়া ব্যবহার কতটুকু ইসলাম বা কোরআন-হাদীছসম্মত তা নিয়ে কিছু আলোচনা করছি। এ বিষয়ে অনেকে জানতে চেয়েছেন।
প্রায় সব কল্যানকর তাবিজ ও ঝাড়ফুঁক-ই বুজুর্গদের ইজতেহাদ, অভিজ্ঞতা ও কাশফের মাধ্যমে উদ্ভূত। কোরান-হাদীছে স্পষ্ট বলা হয়নি যে অমুক তাবিজ বা অমুক ঝাড়ফুঁক দ্বারা অমুক কাজ হবে। তাই কোনো তাবিজে কাঙ্ক্ষিত ফল না হলে কোরআন-হাদীছের সত্যতা নিয়ে কিছু বলার বা ভাবার অবকাশ নেই।
যেমন জ্বর বেশি হলে এই আয়াত পড়ে ফুঁ দিলে কাজ হয় -
يا نار كونى بردا و سلاما على ابراهيم
“ইয়া নারু কুনি বারদাও ওয়া সালামান আলা ইব্রাহিম”
যার অর্থ - হে আগুন ইব্রাহিমের (আ:) জন্য শান্তিদায়ক ঠান্ডা হয়ে যাও।
কোনো কোনো বুজুর্গ এ আয়াত দ্বারা বালিতে ফুঁ দিয়ে জ্বলন্ত আগুনে ছিটিয়ে দিয়ে বাড়িঘরে আগুন লাগলে নিভিয়ে দিয়েছেন (সুবহানাল্লাহ)। এখন যদি এ আমল দ্বারা আগুন না নিভে তাহলে কোরআনের ক্ষমতা নেই এ কথা বলা যাবে না।
তাবীজ ও ঝাড়ফুঁক কোরআন হাদীছের বাক্যাবলী দ্বারা বৈধ ও কল্যানকর উদ্দেশ্যে করা হলে তা জায়েয।
→ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি আমল ছিলো -
عن عائشة رضى الله عنه انً النًبىً صلًى الله عليه وسلم كان اذا آوى الى فراشه كل ليلة جمع كفيه ثمً نفث فيهما فقرا بهما قل هو الله احد و قل اعوذ برب الفلق و قل اعوذ برب الناس ثمً مسح بهما ما استطاع من جسده يبدا بهما على رأسه و وجهه وما اقبل من جسده يفعل ذالك ثلاث مراتٍ-
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, প্রতি রাতে বিছানায় শয়ন করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’হাতের তালু একত্রিত করে তাতে সূরা ইখলাছ,ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিয়ে মাথা ও মুখমণ্ডল হতে সারা শরীর তিন বার মসেহ করতেন। (তিরমিজী শরীফ, ২য় খণ্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা)
→ আয়িশা (রা.) বলেন, বিপদ আসার পর যা লটকানো হয় তা তামীমা (অর্থাৎ নাজায়েজ তাবীজ) এর অন্তর্ভূক্ত নয়।
→ মুসলীম শরীফের হাদীছে রয়েছে -
عن عوف بن مالك الاشجعى قال كنا نرقى فى الجاهلية فقلنا يا رسول الله كيف ترى فى ذالك ؟ فقال اعرضوا على رقاكم لا بآس بارقى ما لم يكن فيه شرك-
(رواه مسلم فى كتاب الاسلام-باب استحباب الرقية -------- والنظرة )
অর্থাৎ, হযরত আউফ ইবনে মালিক আশজায়ী বলেন, আমরা জাহেলী যুগে (বিভিন্ন মন্ত্র দ্বারা) ঝাড়ফুঁক করতাম। তাই জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? তিনি বলেন, তোমরা কী (মন্ত্র) দিয়ে ঝাড়ফুঁক করো তা আমার কাছে পেশ করো। যাতে শিরক নেই এমন কিছু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করাতে দোষ নেই। (মুসলীম শরীফ, কিতাবুস সালাম)
→ ইমাম আবু বাকর ইবনে আবী শাইবাহ ‘মুনান্নাফ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন,
আমর ইবনে শুআইব তিনি
|
তাঁর পিতা থেকে তিনি
|
তাঁর বাবা থেকে (আমর ইবনে শুয়াইব এর দাদা) থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে, সে যেন
এই দোয়া শিখিয়ে দিলেন (আউযুবিকালিমা – তিহিত্তা- ম্মা-তি মিন গাদাবিহি- ওয়া ইকা-বিহী- ওয়া শাররি ইবা- দিহি-ওয়া মিন হামযা- তিশ শায়া- ত্বি-নি ওয়া আই ইয়াহদুরুন।
অর্থাৎ-আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীগুলোরআশ্রয় নিচ্ছি তাঁর অসন্তুষ্টি ও তাঁর আযাব থেকে এবং তাঁর বান্দাদের অকল্যাণ ও শয়তানদের কুমন্ত্রণাদি থেকে আর তাদের উপস্থিতি থেকে,।”)
তাহলে এগুলো তার ক্ষতি হতে দেবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।
রেফারেন্স :
★ ইমাম আবূদাউদ (রাহ.) : সুনানে আবূ দাউদ : কিতাবু-তিব্বের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
★ মিশকাত শরীফ “বাবুল ইসতিআযা”অধ্যায় হাদিস নং-২৩৬১
★ তিরমিযি এবং
★ আবু দাউদ
→ এ সম্পর্কে আরো কিছু হাদিস :
عن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده قال قال رسول الله صلى الله وسلم1 (১)
اذا فرغ احدكم فى نومه فليقل بسم الله اعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وسوء عقابه و من شر عباده و من شر الشياطين -----------------عليه (اخرجه ابن ابى شيبه فى مصنف حديث رقم 24013 )
এ হাদীছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) কর্তৃক তাঁর বাচ্চাদের জন্য তাবীজ লিখে দেয়ার কথা উল্লখ আছে। ( মুসান্নেফে আবি শায়ব হাদীছ নং- ২৪০১৩)।
(২) عن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده قال قال رسول الله صلى الله وسلم كان يعلمهم من الفزع كلمات اعوذ بكلمات الله------------------- فعلقه عليه- (اخرجه ابو داؤد فى الطب)
এ হাদীছেও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) কর্তৃক তাঁর বাচ্চাদের জন্য তাবীজ লিখে দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। ( আবু দাউদ)
(৩)
عن ثوير قال كان مجاهد يكتب للناس التعويذ فيعلقه (اخرخه ابن ابى شيبة حديث رقم 24011)
و اخرج عن ابى جعفر و محمد بن شرين و عبيد الله بن عبد الله بن عمر و الضحاك ما يدل على انهم كانوا يبيحون كتابه التعويذ و تعليقه او ربطه بالعضد و نحوه- انظر حديث رقم -24012-24013-24015-24018)
এ রেওয়ায়েতে হজরত মুজাহিদ (রহঃ) কর্তৃক মানুষকে তাবীজ লিখে দেয়ার কথা বর্ণিত আছে এবং আবু জাফর, মুহাম্মদ ইবনে শিরিন (রহ:) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:)-এর পুত্র উবায়দুল্লাহ ও জাহহাক প্রমুখের দ্বারা অন্যদেরকে তাবীজ লিখে দেয়ার কথা, সূতা বাঁধা, তাবীজ হাতে বা গলায় বাঁধা ও তাবীজ লেখা বৈধ হওয়া মর্মে তাঁদের মন্তব্য বর্ণিত হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদীছ নং- ২৪০১১, ২৪০১২, ২৪০১৪, ২৪০১৫, ২৪০১৮)
→ ”যাদুল মাআদ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে – তাবিজ তুমার ধারন করা জায়েজ কিনা- এ প্রসংগে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) তিনি হযরত ইমাম জাফর সাদিক ( রাঃ) কে প্রশ্ন করেন।
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (রাঃ) বললেনঃ ”যদি আল্লাহর কালাম হয় অথবা রসুলুল্লাহর হাদিস হয়-তাহলে ধারণ করো এবং ঐ তাবিজের (উসীলার) মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শেফা প্রার্থনা কর”।
রেফারেন্স : [যাদুল মাআদ]
→ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর পুত্র আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন” আমি আমার পিতা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে হৃদকম্পন রোগী ও জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য তাবিজতুমার লিখতে দেখেছি”
রেফারেন্স : [আদিল্লাতু আহলিছ-সুন্নাহ ও অন্যান্য গ্রন্থ]
খারাপ নযর ও বাতাস লাগা :
নযর ও বাতাস লাগা ইসলাম সম্মত কি-না, তা আমাদের জানা থাকা দরকার। অর্থাৎ, সু-নযর বা কু-নযর ও জ্বীনের বাতাস বা আছর সঠিক কি-না?
→ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন -
العين حق- ( رواه مسلم فى كتاب السلام-باب الطب و المرض و الرقى)
অর্থাৎ, নযর লাগা সত্য। (মুসলীম শরীফ, কিতাবুস সালাম)
আর বাতাস লাগার অর্থ যদি হয় জ্বিনের বাতাস বা তাদের খারাপ নযর বা খারাপ আছর লাগা, তাহলে এটাও সত্য; কেননা জ্বিন মানুষের ওপর আছর করতে সক্ষম।
★ কোরআনে আল্লাহ্ পাক বলেন, আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি (সূরা বাক্বারা)।
জ্বিনের মধ্যে মানুষের মতই মু’মেন ও বে-দ্বীন এবং দুষ্ট জ্বিনও রয়েছে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একই সাথে ৪০০ জ্বিন ঈমান এনেছিলো। এখনো মক্কা শরীফে মসজিদে জ্বিন রয়েছে।
★ কোরআন শরীফে একটি সূরার নাম রয়েছে ‘সূরায়ে জ্বিন’। সুতরাং আধুনিকতার দোহাই তুলে জ্বিন জাতির অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোনো অবকাশ মুসলমানের নেই। এটাও জেনে রাখা দরকার জ্বীন কোনো কোনো জীবের আঁকারও ধারণ করতে পারে এবং মানুষের ওপর ভর করতে পারে।
→ হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে -
عن ابن عباس رضى الله عنه عن النبىِ صلى الله عليه وسلم قال : العين حق ولو كان شىءُ سابق القد ر سبقته العين و اذا استغسلتم فاغسلوا- (رواه مسلم فى كتاب السلام- باب الطب--/ رواه الترمذى فى ابواب الطب- ما جاء ان العين حق والغسل لها وقال: هذا حديث حسن صحيح- واللفظ لمسلم)
অর্থাৎ, ইবনে আব্বাস (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নযর লাগা সত্য। যদি কোনো কিছু ভাগ্য অতিক্রম করতে পারত, তাহলে নযর তাকে অতিক্রম করত। যখন তোমাদের কাউকে ধুয়ে দিতে বলা হয়, সে যেন ধুয়ে দেয়।
★ মুসলীম শরীফ- কিতাবুস সালাম
★ তিরমিজী শরীফ-আবওয়াবাবে তিব্বী- বাবে মা জা’আ ইন্নাল আইনা হাক্কু ওয়া গোসলু লাহা ওয়া কালা হাজা হাদীছুন সহহীহুন)।
হাদিসের আলোকে ঝাড়ফুক সম্পর্কিত কিছু দোয়া :
→ আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (সাঃ) অসুস্থ
ব্যাক্তিদের উপর এই দোয়া পড়ে ফু দিতেন। অসুস্থ
ব্যাক্তি দ্রুত আরোগ্য লাভ করতো।
দোয়াটি হল :
রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য প্রাপ্তির দোয়াঃ
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣُﺬْﻫِﺐَ ﺍﻟْﺒَﺎﺱِ ﺍِﺷْﻒِ ﺍَ ﻧْﺖَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻰْ ﻻَ ﺷَﺎﻓِﻰْ
ﺍِﻻَّ ﺍَ ﻧْﺖَ ﺷِﻔَﺎﺀً ﻻَﻳُﻐَﺎﺩِﺭُ ﺳُﻘْﻤًﺎ
.
`উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বান নাছি মুযহিবাল বাছি -
ইশফি আনতা শাফি - লা শাফি ইল্লা আনতা শিফা'ন লা
ইয়োগাদিরু সুকমা।
রেফারেন্স :
★ বুখারী শরীফ খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৮৫৫
→ নবী (সঃ) আপন পরিবারের কোন রোগী দর্শন করার সময় নিজের ডান হাত তার ব্যথার স্থানে ফিরাতেন এবং এ দুয়াটি পরতেন,
“আযহিবিল বা’স, রাব্বানা-স, ইসফি আন্তাস শা- ফী, লা সিফা-আ ইল্লা সিফ-উক, সিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাকামা।”
অর্থাৎ, হয়ে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দুর কর এবং আরোগ্য দান কর। (যেহেতু) তুমি রোগ আরোগ্যকারী। তোমারই আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। তুমি এমন ভাবে রোগ নিরাময় কর, যে তা রোগকে নির্মূল করে দেয়। (বুখারি ও মুসলিম)
যাদু বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝাড়-ফুঁক করাতে কোন অসুবিধা নেই। যদি তা কুরআনের আয়াত বা অন্য কোন বৈধ দু’আর মাধ্যমে হয়ে থাকে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি সাহাবীদেরকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ঝাড়-ফুঁকের বিভিন্ন দু’আ রয়েছে। তম্মধ্যে কয়েকটি দু’আ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
رَبَّنَا اللَّهُ الَّذِي فِي السَّمَاءِ تَقَدَّسَ اسْمُكَ أَمْرُكَ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ كَمَا رَحْمَتُكَ فِي السَّمَاءِ فَاجْعَلْ رَحْمَتَكَ فِي الْأَرْضِ اغْفِرْ لَنَا حُوبَنَا وَخَطَايَانَا أَنْتَ رَبُّ الطَّيِّبِينَ أَنْزِلْ رَحْمَةً مِنْ رَحْمَتِكَ وَشِفَاءً مِنْ شِفَائِكَ عَلَى هَذَا الْوَجَعِ فَيَبْرَأَ
“হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার নাম অতি পবিত্র। আকাশ এবং যমিনে আপনার আদেশ বাস্তবায়িত হয়। আকাশে যেমন আপনার রহমত বিস্তৃত রয়েছে, জমিনেও অনুরূপভাবে আপনার রহমত বিস্তার করুন। আপনি আমাদের গুনাহ ও অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন। আপনি পবিত্রদের প্রভু, এই রোগীর উপর আপনার রহমত ও শিফা অবতীর্ণ করুন। এই ভাবে ঝাড়-ফুঁক করলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠত।”
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
“আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। প্রতিটি এমন রোগ আরোগ্যের জন্যে, যা তোমাকে কষ্ট দেয়। প্রতিটি মানুষের অকল্যাণ থেকে এবং হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ তোমাকে শিফা দান করুন। আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।”
أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
আমি আল্লাহ এবং তাঁর কুদরতের উসীলায় আমার কাছে উপস্থিত ও আশংকিতকারী অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রোগী ব্যক্তি শরীরের যেখানে ব্যথা অনুভব করবে, সেখানে হাত রেখে উপরোক্ত দু’আটি পাঠ করবে। উপরের দু’আগুলো ছাড়াও হাদীছে আরো অনেক দু’আ বর্ণিত হয়েছে।
ইমামগনের মতামত ও অন্যান্য কিতাবাদি থেকে প্রমান :
→ হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ, আল্লামা শামী (রাহ.) লিখেন, নাজায়িজ তাবিজ হল ঐ সব তাবিজ যা কুরআন বহির্ভূত।
(রাদ্দুল মুহতার, খন্ড ৫, পৃ: ২৩২)।
→ অতপর তিনি আরোও লিখেন, কুরআনে কারীম দ্বারা অথবা আল্লাহর নাম দ্বারা তাবিজ লিখলে কোন অসুবিধা নেই। (রাদ্দুল মুহতার, খন্ড ৬, পৃ:৩৩৬)।
→ ইমাম কুশাইরী (রাহ.) ঝাড়-ফুঁক এবং তাবিজকে দোয়ার বিকল্পরূপে উল্লেখ করেছেন। কারণ, দোয়া তাবিজ এবং ঝাড়-ফুঁক প্রভৃতি সবকিছুতেই আল্লাহর নামের ওছিলা গ্রহণ করে আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যা অবৈধ হওয়ার কোন কারণ নেই। বরং এগুলিও একান্তভাবে আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনার একটি পদ্ধতিরূপে গ্রহণযোগ্য। এই গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিকে কুফুরী ও জাহেলিয়াত যুগের শেরেকী কালামের কুফুরী ও জাহেলিয়াত যুগের শেরেকী কালামের সাথে একাকার গণ্য করা মোটেও যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।
→ তাবীজ নিয়ে আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়া :
قال عبد الله بن احمد قرأ ت على ابى ثنا يعلى بن عبيد ثنا سفيان عن محمد -------- عن ابن عباس قال اذا عسر على المرأة ولادتها فليكتب بسم الله لا اله الا الله الحليم الكريم سبحان الله رب العرش العظيم الحمد لله رب العالمين كانهم يوم يرونها لم يلبثوا الا عشية او ضحاها كانهم يوم يرون ما يوعدون لم يلبثوا الا ساعة من نهار بلاغ فهل بهلك الا القوم الفسقون-
এ রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বাচ্চা প্রসবের সময় প্রসূতির প্রসব বেদনা লাঘব করা ও সহজে প্রসব হওয়ার জন্য বিশেষ তাবীজ শিক্ষা দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
Note : এ রেওয়ায়েতটি সালাফী ও গায়রে মুকাল্লিদগণের সর্বজনমান্য ব্যক্তি ইবনে তাইমিয়া তার ফতোয়ায় উল্লেখ করেছেন।
Reference : ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া - ১৯ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩।
→ ইবনে তাইমিয়া বলেছে -
ويجوز ان يكتب للمصاب و غيره من المرضى شيئا من كتاب الله و ذكره بلمراد المباح ويغسل وبقسى-
(فتاوى ابن تيميه ج/19 صفه/ 63)
অর্থাৎ, অসুস্থ বা বিপদগ্রস্ত লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহ’র কিতাব, আল্লাহ’র জিকির লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করানো জায়েয।
গায়রে মুকাল্লীদগণ যে আরেকজনকে ইমাম হিসেবে মান্য করেন, সেই ইমাম শাওকানীও বলেছেন, সমস্ত ফকহীগণের নিকট এ ধরনের তাবীজ জায়েয (নাইলুল আওতার)।
কোরআন শরীফের আয়াত, আল্লাহ’র নাম ও দোয়ায়ে মাছুরা (যে সব দোয়া হাদীছে উল্লেখ আছে) দ্বারা ঝাড়ফুঁক সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। অনেক হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ঝাড়ফুঁক করতেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এসব ঝাড়ফুঁক ছিল কোরআন ও আসমায়ে হুসনা দ্বারা। এ কারণে এরূপ ঝাড়ফুঁক সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয।
→ যেমন :
وهى جائزه بالقران والاسماء الالهية وما فى معناها بالاتفاق- (اللمعات)
অর্থাৎ, কোরআন, আল্লাহ’র আসমায়ে হোসনা ও অনুরূপ অর্থবিশিষ্ট কিছু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। (লুম’আত)
প্রশ্নোত্তর পর্ব :
সালাফী ও গায়রে মুকাল্লীদগণের দলীল ও তার জাওয়াব :
তাদের দলীল প্রথমতঃ
ওই সব আয়াত যার মধ্যে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদ দূর করাকে আল্লাহ’র শান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন -
(ক) আল্লাহ্ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত কেউই তা দূর করার নেই। আর তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউই নেই। (সূরা-ইউনুস, আয়াত-১০৭)
(খ) আল্লাহ’রই ওপর তোমরা ভরসা করো যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো। ( সূরা মায়েদা:২৩)
(গ) মু’মিনগণ যেন আল্লাহ’র ওপর-ই ভরসা করে। (সূরা ইব্রাহীম:১১)
জাওয়াব :
তাবিজ একটা উসীলা যেমন ওষুধ রোগমুক্তির জন্য উসীলা আমরা আল্লাহর প্রতিই সাহায্যপ্রার্থী হয়েছি (তাজিব-ঝাড়ফুক ও ওষুধ এর দ্বারা) এগুলোর উসীলার মাধ্যমে।
তাবীজ গ্রহণ করা উল্লেখিত আয়াতগুলোর পরিপন্থী হতো যদি তাবীজ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শুধু তাবীজের ওপরই ভরসা করা হতো। কিন্তু যদি ভরসা আল্লাহ’র ওপর থাকে এবং তাবীজকে ওসীলা হিসেবে গ্রহণ করা হয় যেমনটি করা হয় ওষুধ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে, তাহলে আদৌ তা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী হবে না। নতুবা বলতে হবে বৈধ পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করাও উক্ত আয়াতগুলোর পরিপন্থী।
দ্বিতীয়তঃ
ওই সব আয়াত যা’তে শিরকের নিন্দাবাদ করা হয়েছে।
ক) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। অন্য গুণাহ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। (সূরা নিসা:১১৬)
খ) যে ব্যক্তি আল্লাহ’র সাথে শরীক করে সে যেন আকাশ থেকে পড়ে, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করে। (সূরা হজ্ব:৩১)
জাওয়াব
তাবীজের ওপর নিজস্ব প্রভাব বা ক্ষমতা আছে মনে করলে শিরকের প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এ রকম মনে না করলে শিরকের প্রশ্ন অবান্তর। আগেই উল্লেখ করেছি যে তাবীজ গ্রহণ করা জায়েয, তাও শর্ত সাপেক্ষে; এর মধ্যে তাবীজের নিজস্ব ক্ষমতা আছে বিশ্বাস না রেখে আল্লাহ’র রহমতের ওপর বিশ্বাস রাখা শর্ত।
তৃতীয়তঃ
ওই সব হাদীছ যা’তে ঝাড়ফুঁক ও তাবীজেকে শিরক বলা হয়েছে -
ক) যে তাবীজ (পুতি) লটকালো সে শিরক করলো।
খ) অবশ্যই ঝাড়ফুঁক, তাবীজ ও যাদু শিরক।
গ) এক হাদীছে রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একদল লোক উপস্থিত হলো। অতঃপর তিনি নয় জনকে বাই’আত করান, কিন্তু একজনকে বাই’আত করেন নি। তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! একজনকে বাদ রাখলেন কেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তার সাথে একটি তাবীজ রয়েছে। তখন তাঁর হাত ভিতরে ঢুকালেন এবং তাবীজটি ছিঁড়ে ফেললেন। অতপর তাকেও বাই’আত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবীজ ব্যবহার করলো সে শিরীক করলো।
জাওয়াব
১) ও ২) কিছু উত্তর আগেই দেয়া হয়েছে। এখানে প্রথম হাদীছ দুটোতে যে তাবীজের কথা বলা হয়েছে, তার দ্বারা শিরকপূর্ণ তাবীজ উদ্দেশ্য। তার প্রমাণ হল এখানে উল্লেখিত দ্বিতীয় হাদীছে ঝাড়ফুঁককেও শিরক বলা হয়েছে, অথচ সব ঝাড়ফুঁক শিরক নয়; স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমও ঝাড়ফুঁক করতেন, যা পূর্বে সহীহ হাদীছের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, এখানে ঝাড়ফুঁকের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দেয়া হবে তাবীজের ব্যাপারেও একই ব্যাখ্যা দেয়া হবে। এ ব্যাখ্যা করতে আমরা বাধ্য এ কারণেও যে, সহীহ ছাহাবা ও তাবেয়ীনসহ পরবর্তী যুগ পরম্পরায় তাবীজ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩) তৃতীয় হাদীছে তাবীজ থাকার কারণে যে ব্যক্তির বাই’আত না করা এবং তার তাবীজ খুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে, এ দ্বারা কোনোভাবেই সব ধরনের তাবীজ নিষিদ্ধ হওয়ার দলীল দেয়া যায় না। কারণ সে লোকটি ইসলাম গ্রহণের জন্যই এসেছিলো। তাই মুসলমান হওয়ার আগে সে যে তাবীজ লাগিয়েছিলো তা অবশ্যই শিরক-পূর্ণ তাবীজ ছিলো। যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ বলেছেন ও শিরক বলেছেন।