নামাজের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠানো সুন্নাত । নামাযের মধ্যে অন্য সময় রফে’ ইয়াদাইন বা হাত উঠানো জায়েজ নয় (সুন্নাত নয়) । নিম্নে এর দলীল পেশ করা হলোঃ

১. আলকামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্নিত –

 قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّى بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ في أول مَرَّة. أخرجه أبو داود (٧٤٨) والترمذي (٢٥٧) والنسائي (١٠٥٨) وقال الترمذي : حديث حسن وصححه ابن حزم في المحلى ٤/٨٨ وقال أحمد شاكر في تعليقه على الترمذي : هذا الحديث صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ وهو حديث صحيح وما قالوا في تعليقه ليس بعلة.

অর্থ: আব্দল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাযের মত নামায পড়বনা? একথা বলে তিনি নামায পড়লেন, এবং তাতে শুধু প্রথম বারই হাত তুলেছিলেন আর কখনো হাত উঠান নি।

Reference :-
★আবূ দাউদ শরীফ- ৭৪৮,
★তিরমিযী শরীফ-২৫৭,
★নাসায়ী শরীফ-১০৫৮,
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা- ২৪৫৬,
★মুসনাদে আহমদ, ১খ, ৩৮৮পৃ।
★জামউল মাসানীদ

হাদিসের আরো রেফারেন্স সহ মান ও সনদ বিশ্লেষন :-

♦ইমাম তিরমিযি (রহ) একে হাসান বলেছেন।তিনি বলেন,"
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)

♦মুহাদ্দিস আহমদ শাকির এ হাদীস সম্পর্কে বলেন-
“ইবনে হাযম ও অন্যান্য হাফিজুল হাদীস উপরের হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।”
(জামে তিরমিযী, তাহক্বীক আহমদ শাকির ২/৪১)

♦আল্লামা ইবনুত তুরকামানী (রহ) বলেন,
“এই হাদীসের সকল রাবী সহীহ মুসলিমের রাবী”
(আল-জাওহারুন নাকী : ২/৭৮)

♦ইবনে মাসউদ (রা) একদল সাহাবীর সামনে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামায পেশ করেছেন, আর কোন সাহাবী তা অস্বীকার করেননি । বুঝা গেলো, সকলেই তাঁকে সমর্থন করেছেন। যদি হাত উত্তোলন সুন্নাত হতো, তাহলে  সাহাবায়ে কেরাম এর উপর অবশ্যই আপত্তি করতেন। কেননা তাঁরা সকলেই হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলা ইহি ওয়াসাল্লাম)এর নামায দেখেছিলেন ।

♦ ইমাম তিরমীযি বলেন, অনেক ওলামায়ে সাহাবা ও তাবেয়ীন উভয় হাত তুলতেন না। তাদের আমলের দ্বারা এ হাদিছের সর্মথন হলো ।

♦আবূ দাঊদ হযরত সুফয়ান থেকে বর্ণনা করেছেন -
 হযরত সুফয়ান এ সনদে বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বি.) প্রথমবার হাত তুলেছেন। কোন কোন রাবী বলেন একবারই হাত তুলেছেন।

♦ ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে।
 রেফারেন্স :-
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৮;
★তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১১পৃ;
★মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২খ, ৭১পৃ। এটির সনদ সহীহ।

♦ ইমাম  আবু হানিফা (রাদিঃ) যিনি যুগের জলীলুল কদর এবং আযীমুশশান মুজতাহিদ ছিলেন- তিনি এ হাদিসকে কবুল করেছেন এবং এর উপর আমল করেছেন।
★ফতহুল ক্বাদীর
★মিশকাত শরহে মিরকাত)

♦ইমাম মুহাম্মদ ‘কিতাবুল আছারে’ ইমাম আবু হানিফা (রাদি.) হাম্মাদ থেকে তিনি ইবরাহীম নাখঈ থেকে এ ভাবে বর্ণনা করেন-

اِنَّهُ قَالَ لَاتَرْفَعُ الْاَيْدِىْ فِيْ شَىْئٍ مِنْ صَلوتِكَ بَعْدَ الْمَرَّةِ الْاُوْلى

অর্থাৎ, তিনি বলেন, নামাযের মধ্যে প্রথমবার ছাড়া হাত  উত্তোলন করো না।

♦আবূ ইসহাক সাবিয়ী রহঃ উক্ত সনদে বর্ননা করেছেন
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬১। এর সনদ অত্যন্ত সহীহ।

২. হযরত বারা ইবনে আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত:-

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه إلى قريب من أذنيه ثم لا يعود. أخرجه أبو داود (٧٥٢) وابن أبي شيبة (٢٤٥٥) والطحاوي ١/ — وعبد الرزاق في المصنف (٢٥٣٠) والدارقطني (٢٢) فرواه عن البراء ثقتان عدي ين ثابت عند الدارقطني وعبد الرحمن بن أبي ليلى عند غيره وعنهما يزيد بن أبي زياد والحكم بن عتيبة وعيسى والحكم وعيسى ثقتان ويزيد صدوق عند البخاري ومسلم وصحح حديثه الترمذي رقم ( ) وعن يزيد ابن أبي ليلى والسفيانان وشريك و اسرائيل واسماعيل بن زكريا والإمام أبو حنيفة وغيرهم.

অর্থ (সংক্ষেপে) : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় কানের কাছাকাছি হাত তুলতেন। এরপর আর কোথাও হাত তুলতেন না।

Reference :-
★আবূ দাউদ শরীফ-৭৫২,
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-২৪৫৫,
★তাহাবী শরীফ, ১ম খন্ড
★তানযীমুল আশতাত, ১ম খন্ড (ঊর্দূ), পৃঃ ২৯৩

হাদিসের মান :-

♦বারা ইবনে আযিব (রাদ্বি.) এর হাদিছটি ইমাম তিরমিযী এভাবে বর্ণনা করেছেন- فِى الْبَابِ عَنِ البَرَاءِ

♦ইমাম আবু দাউদ হযরত বারা ইবনে আযিব(রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা বরেনঃ

قَالَ رَأيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَفَعَ يَدَيْهِ حِيْنَ اِفْتَتَحَ الصَّلَوةَ ثُمَّ لَمْ يَرْفَعُهُمَا حَتَّى اِنْصَرَفَ

অর্থাৎ,‘তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যখন তিনি নামায আরম্ভ করেছেন, তখন উভয় হাত উত্তোলন করেছেন। পুনরায় নামায থেকে অবসর হওয়ার পূর্বে হাত তোলেননি।

♦দারে কুত্বনী হযরত বারা ইবনে আযিব (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা  করেছেন-
অর্থাৎ, ‘তিনি নবী করীম  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখেছেন, যখন হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামায শুরু করেন উভয় হাত এ পরিমাণ তুললেন যে, তা কানদ্বয়ের সমান্তরাল হয়ে গেলে। অতঃপর নামায থেকে অবসর হওয়ার পূর্বে আর কোন ক্ষেত্রেই হাত উত্তোলন করেননি ।

৩. হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত: –

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ترفع الأيدي في سبعة مواطن، افتتاح الصلاة واستقبال البيت والصفا والمروة والموقفين وعند الحجر، أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٦٥) موقوفا والطبراني (١٢٠٧٢) مرفوعا.

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে। ১. নামাযের শুরুতে, ২. কাবা শরীফের সামনে আসলে, ৩. সাফা পাহাড়ে উঠলে, ৪. মারওয়া পাহাড়ে উঠলে। ৫. আরাফায় ৬. মুযাদালিফায় ৭. হাজরে আসওয়াদের সামনে।

Reference :-
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-২৪৬৫ (সাহাবীর বক্তব্যরূপে)।
★তাবারানী, মুজামে কাবীর(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যরূপে) নং ১২০৭২।
★সুনানে বায়হবাকী, ৫খ, ৭২-৭৩ পৃ।
★ হায়ছামী র. হযরত ইবনে উমর রা. থেকেও মারফূরূপে এটি উল্লেখ করেছেন।(দ্র, ২খ, ২২২ পৃ)

হাদিসের সনদ:-

♦হাকিম ও বায়হাক্বী হযরত আবদুল্লাহ  ইবনে  আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বণর্না করেন-

‘হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, সাত জায়গায় হাত উঠাতে হবে- নামায শুরু করার সময়, কা’বার দিকে মুখ করার সময়, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে, দুইমাওকিফ তথা মিনা ও মুযদালিফায় এবং দু’জুমরা’র সামনে।

♦এ হাদীসটি বাযার হযরত ইবনে ওমর (রাদিঃ) থেকে,

♦হাফিজুল হাদিস ইবনে আবি শায়বাহ হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বি) থেকে,

♦ইমাম বায়হাকী হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বি.) থেকে,

♦তাবরানী এবং বুখারী কিতাবুল মুফরাদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) থেকে কিছুটা পার্থক্যের সাথে উল্লেখ করেছেন।

♦কোন কোন রেওয়ায়াতে” দু’ঈদের নামাযেরও উল্লেখ রয়েছে ।


৪. হযরত জাবির ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত:-

 خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ مَا لِى أَرَاكُمْ رَافِعِى أَيْدِيكُمْ كَأَنَّهَا أَذْنَابُ خَيْلٍ شُمْسٍ اسْكُنُوا فِى الصَّلاَةِ গ্ধ. أخرجه مسلم (٤٣٠)

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বললেন, ব্যাপার কি? তোমাদেরকে দেখছি বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের মতো করে হাত ওঠাও। নামাযে স্থির থাক।

Reference :-
★মুসলিম শরীফ-হাদীস নং ৪৩০
★আবু দাউদ ১;১০৯
★সুনানে নাসায়ী ১;১১৭

৫. হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেনঃ –

 رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أفتتح الصلاة رفع يديه حذو منكبيه وإذا أراد أن يركع وبعد ما يرفع رأسه من الركوع فلا يرفع ولابين السجدتين. أخرجه الحميدي في مسنده من طريق سفيان قال ثنا الزهري قال أخبرني سالم بن عبد الله عن أبيه. وسنده صحيح. ٢/٢٧٧ رقم ٦١٤.

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত ওঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত ওঠাতেন না, দুই সেজদার মাঝখানেও না।

Reference :-
★হুমায়দী (ইমাম বুখারীর উস্তাদ) তাঁর মুসনাদে এটি উদ্ধৃত করেছেন। ২খ, ২৭৭ পৃ,(হাদীস নং ৬১৪)। এর সনদ সহীহ।

হাদিসের সনদ বিশ্লেষণ :-

★হাফিজ মুগলতাঈ রহঃ বলেছেন, এর সনদে কোন সমস্যা নেই।
★শায়খ আবেদ সিন্ধী রহঃ বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে এটি অবশ্যই সহীহ।
★ইমাম মালিক রহঃ থেকে ইবনুল কাসিম ও ইবনে ওয়াহব রহঃ একবার হাত ওঠানোর যে বর্ণনা পেশ করেছেন, যা আল মুদাওয়ানা’য় বিদ্ধৃত হয়েছে, তা এই বর্ণনার সমর্থন করে। এমনিভাবে হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসটি এবং তাঁর আমলও এর সমর্থক।
★ইবনে আবী শায়বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু স্বীয় মুসান্নাফে ও
★তাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু শরহে মাআনিল আছার গ্রন্থে
★ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ও ওনার মুয়াত্তায় হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর অনুরূপ আমলের কথা উদ্ধৃত করেছেন।
♦বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. উকত সনদ বর্ননা করেছেন
Reference :-
★তাহাবী : ১/১৬৩,
★ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)
সনদ বিশ্লেষণ :-
♦আল্লামা  তুরকুমানী রহ. বলেছেন, ‘এ বর্ণনার সনদ সহীহ’
(আল-জাওহারুন নাকী)


৬. হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমল:

ক) আসিম ইবনে কুলায়ব রহঃ তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ –

عن عاصم بن كليب عن أبيه أن عليا رضـ كان يرفع يديه في أول تكبيرة من الصلاة ثم لا يرفع بعد. أخرجه ابن أبي شيبة ٢٤٥٧ والطحاوي ١/١١٠ والبيهقي ٢/٨٠ صححه الزيلعي وقال الحافظ في الدراية : رجاله كلهم ثقات وقال العيني : صحيح على شرط مسلم.

অর্থ: হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন। এরপর আর কোথাও তুলতেন না।

Reference :-
★সুনানে বায়হাকী : ২/৮০
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৭;
★তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১০পৃ।
★মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (ঊর্দূ), পৃঃ ৫৫
★তানযীমুল আশতাত, ১ম খন্ড (ঊর্দূ), পৃঃ ২৯৫

সনদ বিশ্লেষণ :-

♦আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
♦সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন।
♦সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।’
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)

খ) ইমাম বায়হাকি ও ইমাম তাহাবী বর্ননা করেন:-

أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِى التَّكْبِيْرَةِ الْاُوْلى مِنَ الصَّلوةِ ثُمَّ لَايَرْفَعُ فِى شَىْئٍ مِنْهَا

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযের প্রথম তাকবীরে তার উভয় হাত উত্তোলন করতেন। এরপর আর কোন অবস্থায়ই হাত উঠাতেন না।

Reference :
★ইমাম বায়হাকি : সুনানে বায়হাকি
★ইমাম তাহাবী : তাহাবী


৭. হযরত আসওয়াদ (রা.) বলেছেনঃ –

رأيت عمر بن خطاب رض يرفع يديه في أول تكبيرة ثم لا يعود. أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٦٩) والطحاوي ١/١١١ وصححه الزيلعي وقال الحافظ ابن حجر في الدراية : وهذا رجاله ثقات. وقال المارديني في الجوهر النقي ٢/٧٥: هذا سند صحيح على شرط مسلم.

অর্থ: আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.কে দেখেছি, তিনি প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন; পরে আর তুলতেন না।

Reference :-
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬৯;
★তাহাবী: ১/১৬৪

সনদ বিশ্লেষণ :-

♦আল্লামা যায়লায়ী রহ. এই হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
♦সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন।
♦আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।’
♦ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, ‘হযরত ওমর রা. এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)


৮. হযরত আব্বাস ইবনুয যুবায়র রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত: – أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه في أول الصلاة ثم لم يرفعهما في شيئ حتى يفرغ. أخرجه البيهقي في الخلافيات. كما في نصب الراية ١/٤٠٤

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন, তখন শুধু নামাযের শুরুতেই উভয় হাত তুলতেন। এর পর নামায শেষ করা পর্যন্ত আর কোথাও হাত তুলতেননা।

Reference :-
★বায়হাকী তার ‘আল-খিলাফিয়াত’ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন।এ হাদীসটির সনদ সম্পর্কে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ বলেছেন, এর বর্ণনাকারীরা সকলেই বিশ্বস্ত।
★বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের টীকা, পৃঃ ১০


৯. আবূ দাঊদ হযরত সুফয়ান থেকে বর্ণনা করেছেন -

حَدَّثَنَا سُفْيَانُ اِسْنَادُهُ بِهَذَا قَالَ رَفَعَ يَدَيْهِ فِىْ اَوَّلِ مَرَّةٍ وَقَالَ بَعْضُهُمْ مَرَّةً وَاحِدَة

অর্থাৎ হযরত সুফয়ান এ সনদে বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বি.) প্রথমবার হাত তুলেছেন। কোন কোন রাবী বলেন একবারই হাত তুলেছেন।


১০. ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সম্পর্কে বর্ণনা করেনঃ –

 أنه كان يرفع يديه في أول ما يفتتح ثم لا يرفعهما . أخرجه ابن أبي شيبة (٢٤٥٨) والطحاوي ١/١١١ وعبد الرزاق ٢/٧١ وإسناده صحيح.

অর্থ: তিনি নামায শুরু করার সময় হাত তুলতেন। পরে আর কোথাও হাত তুলতেন না।

Reference :-
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৫৮;
★তাহাবী শরীফ, ১খ, ১১১পৃ;
★মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২খ, ৭১পৃ। এটির সনদ সহীহ।


১১. আবূ ইসহাক সাবিয়ী রহঃ বলেন,

كان أصحاب عبد الله رض وأصحاب علي رض لا يرفعون أيديهم إلا في افتتاح الصلاة. قال وكيع: ثم لا يعودون. أخرجه ابن أبي شيبة بسند صحيح جدا (٢٤٦١)

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর শাগরেদগণ এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহু উনার শাগরেদগণ কেবল মাত্র নামাযের শুরুতে হাত ওঠাতেন। ওয়াকী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, এর পর আর হাত ওঠাতেন না।

Reference :-
★মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৪৬১। এর সনদ অত্যন্ত সহীহ।

এতএব এতসব দলিলাদ্বিল্লার পরো যদি কেউ উল্টো তর্ক করে না মেনে নিজে গুমরাহ হয় এবং অন্যজনকেও গুমরাহ করে তাহলে এর জন্যে সে নিজে সম্পূর্ণ দায়ি হবে।

১২) বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. বলেন-

‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।’

Reference :-
★তাহাবী : ১/১৬৩,
★ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)
সনদ বিশ্লেষণ :-
♦আল্লামা  তুরকুমানী রহ. বলেছেন, ‘এ বর্ণনার সনদ সহীহ’
(আল-জাওহারুন নাকী)

১৩) উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন ইমাম মালিক রহ. (জন্ম ৯৩ হিজরীতে)। ইলমের অন্যতম কেন্দ্রভূমি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর জীবন কেটেছে। সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং হাদীস শরীফের বিশাল ভান্ডার তার সামনে ছিল। তিনি শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর কর্মকে বুনিয়াদী বিষয় বলে মনে করতেন।

★ইমাম মালেক (রহ) এর প্রসিদ্ধ সাগরিত আল্লামা ইবনুল কাসিম রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে তাঁর যে সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন তা এই-
“ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, “নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য তাকবীরের সময়, নামায়ে ঝুঁকার সময় কিংবা সোজা হওয়ার সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করার নিয়ম আমার জানা নাই।”

★ইবনুল কাসিম রহ. আরো বলেন,
“ইমাম মলিক নামাযের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতিকে (দলীলের বিবেচনায়) দুর্বল মনে করতেন।”
(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা)


১৪) ইমাম তাহাবী সাইয়িদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বি.) এবং আসেম ইবনে কুলাইব(রা) থেকে তিনি আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন:

عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِىْ أَوَّلِ تَكْبِيْرَةٍ ثُمَّ لَايَعُوْد

অর্থাৎ, ‘হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে রেওয়ায়াত করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম তাকবীরে উভয় হাত তুলতেন অতঃপর তা আর কখনো করতেন না।

Reference :-
★মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (ঊর্দূ), পৃঃ ৫৫
★তানযীমুল আশতাত, ১ম খন্ড (ঊর্দূ), পৃঃ ২৯৫

১৫) বুখারী শরীফের শরাহ ‘আইনী’ গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডে লেখা হয়েছে যে,
 হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আশারায়ে মুবাশশারাহ- যাদেরকে নবী করিম (সঃ) বেহেস্তের সুসংবাদ দিয়েছেন তারা নামায আরম্ভ করার সময় ব্যতীত দুই হাত উঠাতেন না । অর্থাৎ রফে’ ইয়াদাইন করতেন না ।
Reference :-
★শরহে বুখারী ইমাম বদরুদ্দীন আইনী গ্রন্থ, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৭

১৬) হযরত হাম্মাদ ইব্রাহীম নাখয়ী (তাবীঈ) বলেছেন যে, তোমরা নামাযে তাকবীরে উ’লা ছাড়া অন্য কোন সময় হাত উঠাবে না ।
Reference :-
★মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (ঊর্দূ), পৃঃ ৫৫
★জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩
★আছারুস সুনান

১৭) হযরত শাহ্‌ ওয়ালিউল্লাহ্‌ মুহাদ্দিস দেহলভী এবং তাঁর সুযোগ্য পুত্র ও পৌত্রগণ যারা এই উপমহাদেশে হাদিস শাস্ত্রের প্রচার ও
প্রসার ঘটিয়েছেন তারা নামাযে রফে’ ইয়াদাইন করেন নাই ।
★হানাফীদের কয়েকটি জরুরী মাসায়েল (লেখকঃ মাওলানা মোঃ আবু বকর সিদ্দীক)

১৮) আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-

“হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না’।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।”
Reference :-
আত-তামহীদ : ৯/২২৬

১৯) হযরত আবু বকর রা: ও হযরত উমর রা: সমস্ত নামাযে শুধু তাকবিরে তাহরিমার সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।
Reference :-
★কিতাবুল মুজমা ইমাম ইসমাঈলী ২য় খন্ড



♦♦রাফউল ইয়াদাইন করা ও না করা এই ২ হাদিসের মধ্যে কোন হাদিসটা বেশি শক্তিশালী,শ্রেষ্ঠ এবং অধিক গ্রহনযোগ্য ?♦♦


♦পরিশেষে আমরা ইমামে আযম আবু হানীফার (রাদ্বি.)ঐ বিতর্ক উপস্থাপন করেছি, যা উভয় হাত উত্তোলন এর ব্যাপারে মক্কা মুয়াযযামায় ইমাম আওযাঈ (রাদ্বি.) এর সাথে হয়েছিল।


২০. ইমাম আবু মুহাম্মদ বোখারী মুহাদ্দিস (রাহ.) হযরত সুফয়ান ইবনে উয়াইনা (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,

একবার হযরত ইমামে আযম (রাদ্বি.) এবং ইমাম আওযাঈ (রাদ্বি) এর সাক্ষাত হলো মক্কা মুয়াযযামার ‘দারুল হানাতীন’ নামক স্থানে। এ দ’জন বুর্যুগের মধ্যে কিছু কথাবার্তা হল। বির্তকটি হুবহু নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো।

ইমাম আওযাঈঃ আপনি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু হতে উঠার সময় উভয় হাত উত্তোলন করেন না কেন?

ইমাম আবু হানিফা : এ জন্যই যে, এ সব জায়গায় উভয় হাত উত্তোলন হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বারা প্রমাণিত নয়।

ইমাম আওযাঈ : আপনি এটা কিভাবে বললেন? আমি আপনাকে উভয় হাত তোলার ব্যাপারে সহীহ হাদিস শুনাচ্ছি-

‘আমাকে যুহরী হাদিস বর্ণনা করেছেন



তিনি সালিম থেকে



সালিম নিজ পিতা থেকে



তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন

যে "রাসুলুল্লাহ  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উভয় হাত তুলতেন, যখন নামায শুরু করতেন এবং রুকুর সময় আর রুকু থেকে উঠার সময়।"

ইমামে আযম : আমার কাছে এর  চেয়ে বেশী শক্তিশালী হাদিস এর বিপরীতে বিদ্যমান।

ইমাম আওযাঈ : আচ্ছা! জলদি পেশ করুন।
ইমামে আযম : নিন। শুনুন ।

* আমার কাছে হযরত হাম্মাদ হাদীস বণর্না করেছেন



তিনি ইব্রাহিম নাখঈ থেকে



তিনি হযরত আলক্বামা এবং আসওয়াদ থেকে



তাঁরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদি:) থেকে বর্ণনা করেন



তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে নিজে দেখেছেন,

"নিশ্চিয়ই নবী করীম  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধু মাত্র নামাযের শুরুতে উভয় হাত উত্তোলন করতেন। এরপর আর কখনো পুনরাবৃত্তি করতেন না।"

ইমাম আওযাঈ: আমার পেশ কৃত হাদীসের উপর আপনার উপস্থাপিত হাদীসের শ্রেষ্ঠত্ব কি? যার কারণে এটা গ্রহন করলেন, আর আমার পেশকৃত হাদিস ছেড়ে দিলেন।

ইমামে আযম : এ, জন্যই যে,
★‘হাম্মদ’ ‘যুহরী’র চেয়ে বড় আলিম ও ফক্বীহ।
★আর ইব্রাহিম নাখঈ সালিম এর চেয়ে বড় আলিম ও ফক্বীহ।
★আলক্বামা ‘সালিমে’র পিতা অর্থাৎ, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের’ চেয়ে ইলমের ক্ষেত্রে কম নন।
★‘আসওয়াদ’ অনেক বড় খোদা ভিরু ফক্বীহ এবং উত্তম।
★আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি.) হলেন ফক্বীহ। কিরাআতের ক্ষেত্রে এবং হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর সাহচর্যের ক্ষেত্রে হযরত ইবনে ওমর (রাদি.) থেকে অনেক বড় ছিলেন। শৈশব থেকে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে থাকতেন। সুতরাং আমার হাদিসখানার রাবী আপনার হাদীসের রাবীদের চেয়ে ইলম ও মর্যাদার দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। এ জন্যই আমার পেশকৃত হাদীস বেশী শক্তিশালী এবং গ্রহনযোগ্য। ইমাম আওযাঈ নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।

Reference :
★মিশকাত শরহে মিরকাত
★ফতহুল কাদির




♦♦অনেক ইমামগন এই রাফে ইয়াদাইন সম্পর্কিত হাদিস রহিত হয়ে গিয়েছে বলে মত দিয়েছেন ♦♦


১) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ (রহ) হতে বর্নিত আছে- তিনি বলেছেন যে, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর পশ্চাতে নামায পড়েছি । তিন শুধু প্রথম তাকবীরে তাহরীমার সময় নামাযের মধ্যে হাত উঠিয়েছেন । ইমাম তাহাবী বলেন যে, এই আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ই রাসূল (সঃ) কে প্রথম রফে’ ইয়াদাইন করতে দেখেছিলেন । কিন্তু (পরে কারনবশত রাসূল (সঃ) এর ইন্তিকালের পর হজরত ইবনে উমর রফে’ ইয়াদাইন পরিত্যাগ করেছিলেন । এর দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল (সঃ) এর এই আমলটি মনসূখ বা রহিত হয়ে গেছে । এই জন্যেই হযরত ইবনে উমর পরবর্তী সময়ে এই আমল পরিত্যাগ করেছিলেন ।
Reference :-
★আনোয়ারুল মুকাল্লেদীণ, ইফাবা, পৃঃ ৫৫
★তাহাবী : ১/১৬৩,
★ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)


২) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছিলেন- যে দশজন সাহাবীর বেহেশতী হওয়ার সংবাদ দেয়া হয়েছে, তারা নামায আরম্ভকালে একবার মাত্র রফে’ ইয়াদাইন ব্যতীত তাঁদের হাত উঠাতেন না ।
ইমাম তাহাবী ও আইনী প্রমাণ করেছেন যে, আবূ হুমায়দের রফে’ ইয়াদাইনের হাদীস কয়েকটি কারনে যয়ীফ সাব্যস্ত হয়েছে । সেই দশজন সাহাবা আবূ হুমায়দের সাক্ষাতে ছিলেন, কিন্তু তাঁদের রফে’ ইয়াদাইনের কথা প্রমাণিত হয় না । ইমাম বুখারী যে ১৭জন সাহাবার রফে’ ইয়াদাইনের হাদীস বর্ননা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হযরত উমর, হযরত আলী, ইবনে উমার, আবূ সাইদ ইবনে যুবাইর রফে’ ইয়াদাইন ত্যাগ করেছিলেন। ইমাম তাহাবী হযরত আনাস ও হযরত আবূ হুরায়রায় হাদীস যয়ীফ সাব্যস্ত করেছেন । আল্লামা জায়লাঈ হজর আবূ সাইদ, হযরত ইবনে আব্বাস, হযরত ইবনে যোবায়ের ও হযরত আবূ হুরায়রার হাদিসকে যয়ীফ বলেছেন । সুতরাং ইমাম বুখারীর রফে’ ইয়ায়াদাইনের হাদীস গ্রহণযোগ্য নয় ।
Reference :-
★সাইফুল মুকাল্লেদীন, প্রণেতা মাওঃ ইব্রাহীম মহব্বতপুরী, পৃঃ ৩৫
★নিহায়া
★কিফায়া

৩) ইমাম আযম আবূ হানীফা (রহঃ) এর মতে রফে’ ইয়াদাইনের হাদীস মনসুখ (রহিত) হয়েছে । এটা হযরত আবুদল্লাহ ইবনে মাসঊদ, হজরত বারা ইবনে আযেব, হযরত জাবের ইবনে সামরা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়ে কিরামের মত । হজরত উমর, হযরত আলী ও হযরত ইবনে উমর (রাঃ) উক্ত রফে’ ইয়াদাইন ত্যাগ করেছিলেন । কূফাবাসী মুহাদ্দিস, শ্রেষ্ঠ ইমাম সুফিয়ান সওরী, ইবরাহীম নাখয়ী, ইবনে আবী লাইলা, আলকামা, আসওয়াদ, শা’বী, আবূ ইসহাক, খায়ছমা, মুগীরা প্রমুখ মহাবিদ্বান গণের এই অভিমত।
Reference :-
★ কামিউল মুবতাদেয়ীন ফী রদ্দে ছিয়ানাতুল মু’মিনীন ,
৩য় খন্ড, প্রণেতা : মাওলানা রুহুল আমীন বসিরহাটী

৪)  ‘তানযীমুল আশ্‌তাত’ নামক গ্রন্থে বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস ফখরুল মুহাদ্দেসীন হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন মূরাদাবাদী উল্লেখ করেছেন যে,
 ১ম যুগে মুসলমানদের রাজধানী ছিল মদিনায় । তখন সেখানে অনেক অনেক সাহাবায়ে কিরাম ও তাব্যীনে এযাম অবস্থান করতেন । মদীনাবাসীদের আমল দেখে ইমাম মালেক (রহঃ) শেষ জীবনে রফে ইয়াদাইন ত্যাগ করেছিলেন । পরে যখন মদিনা হতে কুফায় রাজধানী স্থানান্তরিত হয়ে গেল, তখন লোকেরা সাহাবা ও তাবেঈগনের আমল দেখে রফে’ ইয়াদাইন করা ত্যাগ করেছিলেন । সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, তৎকালীন মদিনা ও কুফাবাসীগন রফে’ ইয়াদাইন করতেন না ।
Reference :-
তানযীমুল আশতাত, ১ম খন্ড (ঊর্দূ), পৃঃ ২৯৬


৫) ইমাম তাহাবী হযরত মুগিরাহ (রাদিঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আমি  ইবরাহীম নাখঈ (রাদ্বি) এর কাছে  আরজ করলাম যে, হযরত ওয়াইল (রাদি) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখেছেন যে, তিনি নামাযের প্রারম্ভে রুকুর সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় হাত উত্তোলন করতেন। তখন  তিনি (ইবরাহীম নাখঈ ) উত্তর দিলেন-

اِنْ كَانَ وَائِلَّ رَاهُ مَرَّةً يَفْعَلُ ذلِكَ فَقَدْ رَاهُ عَبْدُ اللهِ خَمْسِيْنَ مَرَّةً لَا يَفْعَلُ ذلِكَ

অর্থাৎ ‘যদি হযরত ওয়াইল (রা:) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে একবার হাত উত্তোলন করতে দেখেন, তো হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদ্বি.) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পঞ্চাশ বার হাত উত্তোলন না করতে দেখেছেন।

৬) বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার বদরুদ্দীন আইনী (রাদ্বি.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন-
তিনি এক ব্যাক্তিকে রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা তোলার সময় উভয় হাত তুলতে দেখলেন। অতঃপর তাকে বললেন এরূপ করো না, কেননা  এমন  কাজ যা হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে করেছিলেন এরপর ছেড়ে দিয়েছেন ।
এ হাদিছ  থেকে বুঝা গেল যে,  রুকুর আগে ও পরে উভয় হাত উত্তোলন করা ‘মানসুখ’ তথা রহিত। যে সব সাহাবী থেকে কিংবা হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে উভয় হাত উত্তোলন প্রমানিত।

অতএব, বিস্তারিত বর্ননা দ্বারা বুঝা গেল রাসুল (সা) কখনো রাফউল ইয়াদাইন করেছিলেন আর সেটা পরবর্তীতে অসংখ্য সহীহ হাদিস দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে।

ú
Top