উত্তর: আমাদের দেশে এক শ্রেণির নামধারী মওলভী রয়েছে যারা জানাযাকে দোআ ছাড়া নামায মানতে রাজী নয়। অথচ মহান আল্লাহ্ তা‘আলা জানাযাকে নামায হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছেন।
প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিশেষ কারণে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই এর জানাযার নামায পড়তে গেলে মহান রব নিষেধ করত: ইরশাদ করেন-
ولاتُصَلِّ على أحد منهم مات أبدا ولاتقم على قبره-
‘‘আপনি কখনো তাদের (মুনাফিক) কারোর উপর (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং তাদের কবরের নিকট (জিয়ারতের জন্য) দাঁড়াবেন না।’’
[সূরা তাওবাহ: আয়াত- ৮৪] জানাযার নামাযের পর দোআ করা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত-
عن أبى هريرة رضى الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول أذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء-
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির উপর জানাযার নামায পড়বে তারপর তার জন্য খালেস বা নিষ্ঠার সাথে দোআ কর।
[ইবনে মাযাহ: আস্ সুনান: কিতাবুল জানায়েয: হাদীস নং ১৪১৭, আবূ দাঊদ: আস সুনান: কিতাবুল জানায়েয: হাদীস নং ৩১৯৯, ইবনে হিব্বান: আস সহীহ: হাদীস নং ৩০৭৭, ইমাম সুয়ূতী: জামেউস্ সগীর: হাদীস নং ৭২৯, খতিব তিবরিযী: মিশকাতুল মাসাবীহ: হাদীস নং ১৬৭৪, বায়হাকী: আস্ সুনানুল কোবরা/ইমাম নবভী: রিয়াদুস্ সালেহীন: হাদীস নং ৯৩৭, ইমাম দায়লামী: আল ফিরদাউস: হাদীস নং ২২ ইত্যাদি] রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেই নামাযে জানাযার পর দো’আ করেছেন-
لما التقى الناس بموته جلس رسول الله على المنبر وكشف له ما بينه وبين الشام فهو ينظر الى معتركهم فقال عليه الصلاة والسلام اخذ الراية زيد ابن حارثه- فمضى حتى استشهد وصلى عليه ودعاله وقال استغفرو اله دخل الجنة وهو يسعى ثم اخذ الرايه- جعفر بن ابن طالب فمضى حتى استشهد فضل عليه رسول الله ودعاله وقال استغفر واله – – – الخ-
অর্থাৎ- যখন মুসলমানগণ মুতার যুদ্ধে লিপ্ত তখন নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীর মিম্বরে বসলেন। ফলে প্রিয় নবীজির জন্য মদীনা হতে সিরিয়া পর্যন্ত যুদ্ধ ক্ষেত্র সহ উম্মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, হযরত যায়েদ ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু পতাকা হাতে নিয়েছে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়েছেন। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর জানাযার নামায আদায় করলেন ও দোআ করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বললেন তোমরা তাঁর জন্যে দোআ-মুনাজাত করো। কারণ সে জান্নাতে প্রবেশ করে দৌড়া-দৌড়ি করছে। এবার হযরত জাফর ইবনে আবু তালেব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু পতাকা হাতে নিয়েছে অতঃপর তিনিও শহীদ হয়েছেন। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামাযে জানাযা আদায় করলেন ও দোআ করলেন এবং বললেন- তোমরা তাঁর জন্য দোআ করো।
[আল হাদীস, ইমাম কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম: ফাতহুল ক্বাদীর: কিতাবুল জানায়েয, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী: উমদাদুল ক্বারী, আল্লামা ওয়াকেদী: কিতাবুল মাগাজী, মেরকাত শরহে মেশকাত: ২য় খন্ড ইত্যাদি] এই হাদীসে পাক দ্বারা সরাসরি প্রমাণ হয়ে যায়, স্বয়ং আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মুতার শহীদদের জানাযার নামাযের পর দোআ করেছেন। এবং দোআ ও ইস্তেগফার করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নামাযে জানাযার পর দোআ করা সাহাবীগণের আমল-
عن المستظل بن حسين ان عليا رضى الله عنه صلى على جنازة بعد ما صلى عليها-
অর্থাৎ- হযরত মুসতাজিল ইবনে হুছাইন আলায়হির রাহমাহ্ বর্ণনা করেন, নিশ্চয় হযরত মওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তির লাশের উপর জানাযার নামায আদায়ের পর তাঁর জন্যে দোআ করেছেন।
[ইমাম বায়হাকী: সুনানে কুবরা, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ২১৯] عن عمرو بن مرة عن خيثمة أن أبا موسى صلى على الحارث بن قيس الجعفى بعد ما صلى عليه- الحديث-
‘‘হযরত আমরা বিন র্মুরা আলায়হির রাহমাহ্ থেকে বর্ণিত তিনি প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত খায়ছামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় সাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু মুসা আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত হারেস ইবনে কায়েছ আল জু’ফী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর জানাযার নামায আদায়ের পর তার জন্য দোআ করেছেন। [বায়হাকী: আস্ সুনানিল কোবরা, হাদীস নং ৬৯৯৭] জানাযার নামাযের পর কাতার ভঙ্গ করে একাকী কিংবা সম্মিলিতভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে- সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, দরূদ শরীফ ও দোআ ইস্তেগফার করা মুস্তাহাব ও উত্তম তরিকা। এর দ্বারা মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং দোআকারী সাওয়াবের অধিকারী হন। নামাযে জানাযার পর দোআ স্বয়ং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবী-তাবেয়ীগণের যুগ থেকে চলে আসছে, এখনও পর্যন্ত সুন্নী হাক্কানী ওলামায়ে কেরাম এবং নবীপ্রেমিকদের মাধ্যমে এই পূণ্যময় আমল জারী রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্। এ ধরনের নেক আমলকে বিদআত ও না-জায়েয বলা মূলত: মূর্খতা, অজ্ঞতা অথবা উপরোক্ত হাদীস সমূহকে অস্বীকার করার নামান্তর। আর পবিত্র হাদীসকে অস্বীকার করা অনেক বড় গোমরাহী।
উত্তর: ২. জানাযার নামাযে ইমামতির হক সর্বাগ্রে ইসলামী শাসকের। অতঃপর তার প্রতিনিধি, অতঃপর ক্বাযীর। এরপর জুমুআর খতিবের তারপর মহল্লার ইমামকে অগ্রাধিকার দেয়া মুস্তাহাব। তবে মহল্লার ইমাম ওলী অপেক্ষা উত্তম হতে হবে। অন্যথায় মৃত ব্যক্তির ওলী উত্তম। যদি উপযুক্ত হয়। এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোক্তর বিভাগে পূর্বে বিস্তারিত প্রামাণ্য আলোচনা প্রদত্ত হয়েছে। [গুনিয়া/দুররুল মুখতার ইত্যাদি]