প্রশ্ন: কিছু দিন আগে আমার এক ফুফাত ভাই মারা যায়। ঢাকায় যেহেতু আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন ও শহরের অনেক বন্ধু ও সহকর্মী আছে তাই এখানে তার নামাযে জানাযা হয়। অবশ্য তার একমাত্র ছেলে নামাযে জানাযা অংশ নেয় নাই। তাকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় গ্রামে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। যাতে ছেলে অংশগ্রহণ করে। গ্রামে ২/১জন মৌলানা নামাযে জানাযায় আপত্তি তোলে- যে নামাযে জানাযা পড়ার নিয়ম শরীয়তে নেই। অথচ আমরা দেখি একই ব্যক্তির একাধিকবার জানাযার নামায পড়া হয়। সঠিক মাসয়ালা জানালে অনেকেই উপকৃত হবে।
উত্তর: নামাযে জানাযা মুমিন মৃত ব্যক্তির হক্ব ও অধিকার। এটা আদায় করা ফরযে কেফায়া অর্থাৎ- যে কেউ আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যায়। নতুবা যারা মৃত্যুর সংবাদ শুনেছে কিন্তু কেউ জানাযার নামাযে উপস্থিত হয়নি তখন সবাই গুনাহগার হবে। মৃত ব্যক্তির অলি বা অভিভাবক এক বা একাধিক হলে একজনের উপস্থিতি বা তার অনুমতি সাপেক্ষে মহল্লার ইমাম বা অন্য কেউ নামাযে জানাযা পরিচালনা করলে জানাযার ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যায়। অন্য কারো জন্য ২য় বার নামাযে জানাযা পড়ার বিধান নেই। যেমন ইলমে ফিক্বহের বিশ্ববিখ্যাত কিতাব হেদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
ان صلّى الولى لم يجز لاحد يصلى بعد لان الفرض يتادى بالاول والنفل بهاعير مشروع-
অর্থাৎ- যদি (মৃত ব্যক্তির) অলি বা নিকটতম অভিভাবক নামাযে জানাযা আদায় করে তবে তার পরে অন্য কারো জন্য ২য় বার নামাযে জানাযা পড়া বৈধ হবে না। কেননা প্রথম জানাযার নামাযের মাধ্যমে ফরয আদায় হয়ে গেছে। তারপর পড়া হলে নফল হবে এবং জানাযার নামাযে নফল শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নাই। ফতোয়ায়ে আলমগীরি ও দুররুল মুখতার ফতোয়া গ্রন্থের বরাতে বাহারে শরীয়তে উল্লেখ আছে-
اگر ايك ولى نے نماز پڑهاوى تو دوسرے اولياء اعاده نهيں كرسكتے-
অর্থাৎ যদি একজন নিকটতম অলি বা অভিভাবক জানাযার নামায পড়িয়ে দেয় তবে অন্য অলি বা অভিভাবকরা উক্ত নামাযে জানাযা পুনরায় পড়তে পারবে না। আর মৃত ব্যক্তির অলি বা অভিভাবক ছাড়া কেউ জানাযার নামায পড়লে এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তি অভিভাবকের চেয়ে ইমামতির অধিক হক্বদার না হলে যেমন: রাষ্ট্রপতি, বাদশাহ বা তার প্রতিনিধি অথবা রাষ্ট্রীয় কাজী আর অভিভাবক তাকে অনুমতি প্রদান না করলে এবং উক্ত নামাযে জানাযার অভিভাবক শামিল না হলে তবে অভিভাবকের জন্য পুনরায় নামাযে জানাযা পড়া বৈধ। যদি নিকটতম অভিভাবক ইচ্ছা করে। তবে ইদানিং আমাদের দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একাধিকবার নামাযে জানাযার (শহরে একবার, ২য় বার গ্রামে) যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা লোক দেখানো ও খেয়াল খুশিমত অর্থাৎ শরীয়তের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে- যার যেমন ইচ্ছা তেমন করার নামান্তর। তবে মৃত ব্যক্তির জন্য দো-মুনাজাত, তাসবিহ-তাহলীল, দান-সদকা, ফাতেহাখানি, খতমে ক্বোরআন, খতমে গাউসিয়া ইত্যাদি ইসালে সাওয়াবের আয়োজন যত বেশি করা হবে জিবীত ও মৃত সকলের তত বেশি উপকৃত হবে।
উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির নিকটতম অলি/অভিভাবক হল স্বীয় পিতা ও ছেলে। তারা না থাকলে অলি হবে চাচা ও ভাই। মূলত মাসয়ালা হল মৃত ব্যক্তির প্রকৃত অলি/অভিভাবক নামাযে জানাযা আদায় করলে অথবা নামাযে জানাযা আদায় করার অনুমতি দান করলে ২য় বার নামাযে জানাযা পড়া শরীয়ত সম্মত নয়। [হেদায়া ও ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া- নামাযে জানাযা অধ্যায়]