উত্তর: প্রিয়নবী হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরব জাতিকে ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার হুকুমে অসংখ্য মু’জিজা প্রকাশ ও সংঘটিত হয়েছে। তম্মধ্যে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া/বিদীর্ণ হওয়া। হাদীস ও তাফসিরবিশারদ ঐতিহাসিকগণের বর্ণনানুসারে প্রিয়নবী নুরে মুজাস্সাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদর্শিত ও অতি প্রসিদ্ধ নির্ভরযোগ্য মু’জিজা বা অলৌকিক ঘটনা। হিজরতের কয়েক বছর পূর্বে মক্কায় থাকাকালীন নিজ বংশ কুরাইশ ও মক্কার কাফির-মুশরিকদের একদল নেতা একদা আল্লাহর রাসূলের দরবারে চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার কথা বলল। তাদের মধ্যে আবু জাহেল, ওয়ালিদ বিন মুগিরাহ্, আস ইবনে ওয়ায়েল, আস ইবনে হিশাম, আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুস, আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব, যামআহ ইবনুল আসওয়াদ ও নযর ইবনে হারেস প্রমুখ কাফের নেতারা ছিলেন। ঐ দিন রাতের আকাশে পূর্ণ চন্দ্র দেখা গিয়েছিলো, সে মুহূর্তে তারা বললো- আপনার নবুওয়াতের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এই চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখান। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- দ্বিখণ্ডিত হলে কি তোমরা ঈমান আনবে? তার বললো হ্যাঁ! এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রিয়নবী রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আপন হাত মোবারকের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলে তাৎক্ষণিক চাঁদটি স্পষ্ট দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। দু’খণ্ডের মাঝখানে হেরা পর্বত দৃশ্যমান হলো। চাঁদের একখণ্ড জাবালে আবী কুবাইস বরাবর, অপরটি কাইকাআন বরাবর দৃশ্যমান হলো। ইমাম ইবনে কাসীরসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামী ইতিহাস বেত্তাগণ এ ঘটনাকে নির্ভুল বলে মত ব্যক্ত করেছেন। এ মু’জিজাকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা ‘সূরা ক্বামার’ অবতীর্ণ করেন। যার প্রথম দুই আয়াত উক্ত ঘটনাকে নির্দেশ করে। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন-
اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ القَمَرُ واِنْ يَرَوْا ايَةً يُّعرِضُوْا ويَقولوا سحر مُسْتَمِرّ- (سورة القمر- ১-২)
অর্থাৎ- কিয়ামত অতি আসন্ন, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়েছে এবং যদি তারা (কাফির-মুশরিকরা) কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর বলে এটাতো চিরায়ত জাদু। [সূরা আল্ ক্বামার: আয়াত-১-২, পারা-২৭] এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকেও সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে উল্লেখ রয়েছে-
عَن عبد الله ابن مسعودٍ قال انشق القمر على عهدٍ رسول الله صلى الله عليه وسلم شقّتين فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اشهدوا- (رواه البخارى ومسلم)
অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে চাঁদ বিদীর্ণ হয়ে দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘‘তোমরা সাক্ষী থেকো।’’
[সহীহ বুখারী শরীফ: হাদীস নং ৩৩৭৫ ও মুসলিম শরীফ: ] অপর হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-
عن أنس ابن مالك قال أنّ اهل مكّةَ سالوا رسول الله صلى الله عليه وسلم أَنْ يُريَهُمْ ايةً فأراهُمْ القَمَرَ شِقَّيْنِ حَتّى راوا حِراءً بينهُمَا- (رواه البخارى)
অর্থাৎ জলীলুল কদর সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কাবাসী (কাফিররা) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মু’জিজা /নিদর্শন দেখানোর দাবী জানালে- তিনি চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন, এমনকি তখন চন্দ্র দুখন্ডের মাঝখানে তারা হেরা পর্বত দেখেছিল।
[সহীব বুখার শরীফ: পৃষ্ঠা ৩৮] কাফির ও মুশরিকরা মু’জিজার এই দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তবুও তারা ঈমান আনেনি। চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা/মু’জিজা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ্ আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কবিতা/না’তের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন-
سورج الئے پاؤ پلٹے چاند اشارے سے هوچاك
اندهے نجدى ديكه لے قدرت رسول الله كى-
অর্থাৎ- তাঁর (প্রিয়নবীর) ইশারায় অস্তমিত সূর্য উদিত হলো। চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হলো, অন্ধ নজদীরা আল্লাহর মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহান শক্তি (মুজিজা) দেখে নাও।
[সহীহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, হাদ্বায়েকে বখশিশ: কৃত আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেজা (রাহ.), শাহে হাবীবুর রহমান: কৃত- মুফতি আহমদ ইয়ার নঈমী (রাহ.)]